চুনোপুঁটি ধরে রাঘব বোয়ালকে আড়াল করছেন অরুপ রায়, দুর্নীতি প্রসঙ্গে বিস্ফোরক রাজীব

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ সম্প্রতি রাজ্য রাজনীতিতে করোনা আবহেও চর্চিত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে আমফানের ত্রাণ নিয় শাসকদলের বিরুদ্ধে স্বজনপোষণের অভিযোগ।

উত্তর থেকে দক্ষিণ, পূর্ব থেকে পশ্চিম। গোটা রাজ্য জুড়ে একই অভিযোগ সর্বত্র। করোনা পরিস্থিতি উপেক্ষা করে আমফানে মাথার গোঁজার ঠাঁই হারিয়ে একপ্রকার মৃত্যু ভয়কে উপেক্ষা করেই দিকে দিকে ন্যায্য দাবিতে পথে নেমেছেন সহায় সম্বলহীন মানুষগুলো।

দফায় দফায় আন্দোলন ও বিরোধীদের অভিযোগের তীরে চরম অস্বস্তিতে পড়ে শাসকদল। মুখ্যমন্ত্রী হুঁশিয়ারী দেন দুর্নীতিগ্রস্থ নেতাদের কোনোভাবেই ঠাঁই দেওয়া হবে না দলে। প্রয়োজনে করা হবে বহিস্কারও। কারণ তৃণমূল কংগ্রেস তিনি তৈরী করেছেন মানুষের স্বার্থে। মানুষের জন্যে।

মুখ্যমন্ত্রীর হুঁশিয়ারীর সমন পৌঁছতেই দলের অন্দরে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। জেলা নেতৃত্ব, বিধায়ক ও জেলার কো-অর্ডিনেটররা রীতিমত ঝাঁপিয়ে পড়েছেন দুর্নীতিগ্রস্থ নেতাদের চিহ্নিতকরণে। যা নিয়ে দলের অন্দরেই বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ছেন তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতারা।

সম্প্রতি আমফানের ক্ষতিপূরণ নিয়ে দুর্নীতি সামনে আসায় হাওড়ার তিন তৃণমূল নেতাকে সাসপেন্ড করল দল। এরা হলেন সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য জয়ন্ত ঘোষ, পাতিহাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বেচারাম বসু ও উত্তর ঝাপরদহের পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী সুমন ঘোষাল।
উল্লেখ্য, ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় ৩০ জুন হাওড়ার পাঁচজন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা এবং কর্মীকে শোকজ করেছিল দল।

এঁরা হলেন ডোমজুড়ের মাকড়দহ এক নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান কাজল সর্দার, উত্তর ঝাপরদহ গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সুভাষ পাত্র এবং গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধানের স্বামী সুমন ঘোষাল, জগতবল্লভপুরের পাঁতিহাল গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বেচারাম বসু, সাঁকরাইল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জয়ন্ত ঘোষ।

শোকজ করার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর দিতে বলা হয় তাদের। কিন্তু উত্তর আশানরুপ না হওয়ায় দল থেকে এই ৫ নেতার মধ্যে ৩ জনকে সাসপেন্ড করে তৃণমূল। খবর পাওয়া মাত্রই ক্ষোভে ফেটে পড়েন হাওড়া জেলার তৃণমূল কো-অর্ডিনেটর রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।

হাওড়া তৃণমূল জেলা সভাপতি অরুপ রায়ের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করে বনমন্ত্রী বলেন দুর্নীতিগ্রস্থ রাঘব বোয়ালদের বাঁচাচ্ছেন জেলা সভাপতি।

বালি চোরেদের মত ছদ্মবেশে ধরব বনজ সম্পদের চোরেদেরঃ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়

রাজীব বাবুর কথায়, দল জানিয়ে জেলার কো-অর্ডিনেটর ও জেলা সভাপতি দুজনে মিলিত ভাবে সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু এক্ষেত্রে আমি কিছুই জানতে পারলাম না। আমাকে অন্ধকারে রেখে কয়েকজন চুনোপুঁটিকে ধরে কাছের লোক হিসাবে রাঘব বোয়াল, রুই, কাতলা, ইলিশকে বাঁচানোর চেষ্টা চলছে।

তাঁর প্রশ্ন যারা কয়েকজন চুনোপুঁটি ধরে কী হবে? যাদের দুর্নীতিবাজ বলে গোটা জেলার মানুষ চেনে কেন তাদের বিরুদ্ধে অ্যকশন নেওয়া হবে না?

যদিও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মন্তব্য করায় ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন হাওড়া জেলা সভাপতি অরুপ রায়। একই সুরে সুর মিলিয়েছেন হাওড়া জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত কো-অর্ডিনেটর ফিরহাদ হাকিম।

তাঁর কথায়, ” মুখ খুলে রাজীব অন্যায় করেছে। কিছু বলার থাকলে আমাকে বা দলকে বলতে পারত। রাজীব দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতা। ও যা বলেছে তা মিডিয়া বলছে, আমাকে তো বলেনি। দলের কথা মিডিয়ায় আলোচনা করব না। কিছু বলার থাকলে ওকে বলব।”

ফিরহাদ হাকিমের করা মন্তব্যের পাল্টা জবাবও দেন মুখ্যমন্ত্রী ঘনিষ্ঠ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেন, “উনি জানেন না আমি অনেক আগেই জানিয়েছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার হয়নি। ওনার উচিৎ ছিল আমার সঙ্গে কথা বলা।তাহলে উনি জেনে নিতে পারতেন।”

লোকসভা নির্বাচনে বিপর্যয় থেকে শিক্ষা নিয়েই ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে দলীয় শুদ্ধিকরণে নেমেছে তৃণমূল। কিন্তু সেখানে যদি রাঘব বোয়ালরাই অন্তরালে থেকে যান, তাহলে সেটাকে কী আদৌ শুদ্ধি করণ বলা চলে? কার্যত এই প্রশ্নই ছুঁড়ে দিয়েছেন দুঁদে রাজনীতিবিদ রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।

এই একই প্রশ্ন শাসকদলের কাছে রাখলাম আমরাও।

সম্পর্কিত পোস্ট