টানা সাত ঘন্টার বৈঠক শেষ, কংগ্রেসের শীর্ষ পদে থাকছেন সোনিয়া গান্ধী
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ জোর জল্পনার পরেও আপাতত কংগ্রেসের শীর্ষ পদে থাকছেন সোনিয়া গান্ধী। তবে কার্যকরী সভাপতি হিসাবেই থাকছেন তিনি। টানা সাত ঘন্টার বৈঠকের পর কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে গৃহীত হল সিদ্ধান্ত।
এদিন শুরুতেই দলের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক বলে শুরু করেন কেসিভেনুগোপাল। সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর জন্য ওয়ার্কিং কমিটিকে দেওয়া চিঠি পড়ে শোনান তিনি। এরপরেই তৈরি হয় জল্পনা। তবে কি কংগ্রেস সভাপতি পদে গান্ধী পরিবারের বাইরে কেউ?
কারণ কংগ্রেস সভাপতি পদে গান্ধী পরিবারের বাইরে অন্য কাউকে বেছে নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন সোনিয়া।
এর কারণ কি?
গত ৭ অগাস্ট স্থায়ী এবং দীর্ঘ মেয়াদী কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচনের জন্য ২৩ জন বর্ষীয়ান কংগ্রেস সদস্য সোনিয়া গান্ধীকে চিঠি লেখেন।
সূত্রের খবর, সোনিয়া গান্ধীকে পাঠানো সেই চিঠিতে ৭ জন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং বেশ কিছু বর্তমান সাংসদের নাম রয়েছে।
গত ৭ তারিখে পাঠানো চিঠিকে ‘লিক’ করে কংগ্রেসের ইমেজ নষ্ট করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে দাবী করেন কংগ্রেস নেতা কেসি ভেনুগোপাল।
দলের মধ্যে ঘটে যাওয়া বেশ কিছু ঘটনা দলের সদস্যদের দলমুখী করা থেকে বিরত থেকেছে। তাই কর্মীদের দলমুখী করতে অবিলম্বে দলের সভাপতি নির্বাচনের জন্য আর্জি জানিয়েছেন বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতারা। যার মধ্যে রয়েছেন কপিল সিবাল, শশী থারুর, গুলাম নবী আজাদ, পৃথ্বীরাজ চৌহান, বিবেক তাঙ্কা এবং আনন্দ শর্মার মতো নেতারা।
সোনিয়া গান্ধীর ইস্তফা চিঠি শোনার পরেই ফের সোনিয়া গান্ধীকে কংগ্রেস সভাপতি পদের জন্য আর্জি জানান প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। সোনিয়ার পর সভাপতি পদে রাহুলকে আনার জন্য আর্জি জানান বর্ষীয়ান নেতা একে এন্টনি।
২৩ জন কংগ্রেস নেতার তরফে যে চিঠি পাঠানো হয়েছে তা দুর্ভাগ্যজনক বলে দাবী করেন মনমোহন সিং । চিঠির থেকেও চিঠিতে যে সমস্ত কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তা আরও দুর্ভাগ্যজনক বলে দাবী করেছে কংগ্রেস নেতা একে এন্টনি।
একুশের ভোটে যুব সমর্থন লক্ষ্য তৃণমূলের, ১৪ জেলায় একদিনে যোগ ৪ লাখ যুবর
যদিও দল নেতৃত্বের ক্ষেত্রে সোনিয়া এবং রাহুল গান্ধীর সম্মিলিত ভূমিকা থাকবে তা চিঠিতে স্পষ্ট করা হয়।
এদিনের বৈঠকে রাহুল গান্ধীর মন্তব্য ঘিরে যথেষ্ট জলঘোলা তৈরি হয়।
সূত্রের খবর, রাহুল গান্ধীর দাবী যখন মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানের সমস্যার সঙ্গে কংগ্রেসকে কঠিন লড়াই করতে হচ্ছে এবং যখন সোনিয়া গান্ধী অসুস্থ তখন কেন এই চিঠি পাঠানো হল? প্রশ্ন তোলেন তিনি। এমনকি এর মধ্যে বিজেপির যোগ রয়েছে। রাহুলের দাবীর পর সরব হন কপিল সিবাল এবং গুলাম নবী আজাদের মতো নেতারা।
কপিল সিবাল বলেন এই অভিযোগ মিথ্যা। রাহুলের সঙ্গে তার ব্যক্তিগতভাবে কথা হয়। বৈঠকে এরকম কোনও কথা তিনি বলেননি বলে সিবালকে জানান রাহুল।
এমনকি বিজেপি যোগের ইস্তফার ভিত্তিতে গুলাম নবী আজাদ দলকে ইস্তফা দেওয়ার কথা ঘোষণা করলেও। পরে তিনি বলেন রাহুলের কোনও মন্তব্যে নয়, বরং দলের ভিতরের কিছু কারণের জন্য এহেন মন্তব্য করেছেন তিনি।
যদিও কংগ্রেসের বেশ কিছু সদস্য সভাপতি পদের জন্য গান্ধী পরিবারের কাউকে দেখতে চেয়েছিলেন । এর মধ্যে ছিলেন পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং, ছত্তিসগড়ের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেশ বাঘেল এবং রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলোট।
যদিও পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিংয়ের দাবী, সোনিয়া গান্ধী যতদিন খুশি সভাপতি পদে থাকুন। এরপর রাহুলকে বেছে নেওয়া হোক সভাপতির জন্য।
সভাপতি পদে সোনিয়া গান্ধী থাকলেও এতদিন ধরে দলের পুরাতন এবং নতুনের মধ্যে যে সংঘর্ষ চলছিল তা সামনে এসে গেল। এতে দলের তরুণ নেতাদের ওপর বিরাটভাবে প্রভাব ফেলবে এতে বলার কোনও সন্দেহ থাকে না। এমনটাই মত রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিজেপির সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য রাহুল ছাড়া প্রথম সারিতে কাউকে দেখা যাচ্ছে না। বিহার, বাংলা, তামিলনাড়ু এবং অসম নির্বাচনের আগে এই সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করতে না পারলে ফের সমস্যায় পড়তে হতে অয়ারে দেশের প্রবীন রাজনৈতিক দলকে।