বুদ্ধ-অনিলের পথ ধরেই মীনাক্ষীকে আরও তুলে ধরার পরিকল্পনা আলিমুদ্দিনের
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ১৯৭৭ সালে ক্ষমতায় আসার আগে সিপিএমে ছাত্র ও শ্রমিক নেতাদের দাপট ছিল। জ্যোতি বসু যেমন শ্রমিক আন্দোলন করে উঠে এসেছিলেন, তেমনই শ্যামল চক্রবর্তী, বিমান বসু, গৌতম দেবরা তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের গদি টলিয়ে দেওয়া ছাত্র আন্দোলন করে রাজনীতির শিখরে উঠে আসেন।
কিন্তু রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ডিওয়াইএফআই থেকে উঠে আসা নেতাদের গুরুত্ব বাড়ে। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, অনিল বিশ্বাস, মহম্মদ সেলিমরা সেই পথ ধরেই শিখরে উঠে এসেছিলেন। বাংলায় ঘুরে দাঁড়াতে সেই পরীক্ষিত ফর্মুলাতেই ভরসা রাখতে চলেছে আলিমুদ্দিন।
তবে এ ক্ষেত্রে বর্তমান রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের পথ নয়, বরং বুদ্ধ-অনিলদের নিয়ে সেই সময় প্রমোদ দাশগুপ্ত যে পরিকল্পনা করেছিলেন তাতেই এখন ভরসা সিপিএমের।
বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ডিওয়াইএফআইয়ের প্রথম সর্বভারতীয় সম্মেলনে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হয়েছিলেন। সেই সময় তিনি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য কমিটির সম্পাদক ছিলেন। এদিকে সেই সময় ডিওয়াইএফআইয়ের সর্বভারতীয় সম্পাদক ছিলেন উলুবেড়িয়ার প্রাক্তন সাংসদ হান্নান মোল্লা। তিনি টানা তিনটে টার্ম সিপিএমের যুব সংগঠনের সম্পাদক হিসেবে দিল্লিতে রাজনীতি করেছেন।
DYFI- র ১১ তম সর্বভারতীয় সম্মেলনের প্রাক্কালে’ শহীদ মইদুল ব্রিগেড’ পদযাত্রার সূচনা
কিন্তু বুদ্ধর মধ্যে সম্ভাবনা দেখে তাঁকে দিল্লিতে পাঠাতে চাননি প্রমোদ দাশগুপ্ত। তাই ১৯৮৪ সালে কেরলের কালিকটে আয়োজিত ডিওয়াইএফআইয়ের দ্বিতীয় সর্বভারতীয় সম্মেলনে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে আর কেন্দ্রীয় কমিটিতে দেখা যায়নি। সেই সময় থেকেই জ্যোতি বসুর উত্তরসূরি হিসেবে তাঁকে গড়ে তুলতে শুরু করেন প্রমোদবাবু।
অনিল বিশ্বাসের ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। ছোটখাটো চেহারার নদিয়ার এই নেতাকে কিছুতেই দিল্লিতে পাঠাতে রাজি ছিলেন না প্রমোদ দাশগুপ্ত। কার্যত নিজের হাতে করে অনিল বিশ্বাসকে গড়ে তুলেছিলেন তিনি। দিল্লির সঙ্গে তাঁর সংযোগ বলতে প্রথমে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও পরে পলিটব্যুরোর সদস্য হওয়া।
তবে মহম্মদ সেলিমের ক্ষেত্রে গল্পটা অন্যরকম। ১৯৯১ সালে মুম্বাইয়ে আয়োজিত ডিওয়াইএফআইয়ের চতুর্থ সর্বভারতীয় সম্মেলনে তিনি দলের যুব সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই থেকে দিল্লিতে রাজনীতি করেছেন। আসলে বাংলা-ইংরেজি-হিন্দি ও উর্দু, এই চারটি ভাষাতেই সাবলীল সেলিমকে বরাবরই দিল্লিতে ব্যবহার করতে চেয়েছে সিপিএম। তাই তাঁকে সাংসদ করে দিল্লিতে পাঠানো হয়েছিল। যদিও পরে তাঁকে নিয়ে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের পরিকল্পনার জেরে রাজ্যে ফিরিয়ে নেয় বিধায়ক করে মন্ত্রী করা হয়।
কিন্তু একুশের বিধানসভায় বাংলায় শূন্য হয়ে যাওয়ার পর দেখা যাচ্ছে মীনাক্ষী মুখার্জিকে ঘিরে বাম কর্মী-সমর্থকদের উচ্ছ্বাস তুঙ্গে। এই তো মঙ্গলবার সন্ধেয় মাথায় বৃষ্টি নিয়ে দক্ষিণ কলকাতার হাজরায় পথসভা করলেন মীনাক্ষী। কিন্তু মুহূর্তের মধ্যে তাঁর কথা শুনতে এত বেশি সংখ্যক মানুষ ভিড় করলেন যে সেই পথসভা জনসভার চেহারা নিয়েছিল। স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল গাড়ি চলাচল।
সেই মীনাক্ষীকেই ক্রমশ সামনে এগিয়ে দিচ্ছে সিপিএম। তাই বৃহস্পতিবার থেকে কলকাতায় শুরু হতে চলা ডিওয়াইএফআইয়ের সর্বভারতীয় সম্মেলনের আগে দিল্লির একে গোপালন ভবনের সঙ্গে লড়াই করে মীনাক্ষীকে রাজ্যে রেখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত পাশ করিয়ে নিয়েছে আলিমুদ্দিন।
পরিকল্পনা হল মীনাক্ষী ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক থাকবেন, কোনও কেন্দ্রীয় দায়িত্ব নেবেন না। কারণ দিল্লি থেকে নিয়মিত এসে বাংলায় লড়াই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয়। শোনা যাচ্ছে নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটিয়ে দ্রুত রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সম্প্রসারণ করতে পারেন সেলিমরা। সেক্ষেত্রে মীনাক্ষীর সেখানে জায়গা পাওয়া পাকা।