রাজনীতির নতুন বোড়ে করোনা ও আমফান, আমজনতা যেন ডুবে থাকা বাদাম গাছ
শুভজিৎ চক্রবর্তী
না আজ বৃষ্টিকে দেখে প্রেম পাচ্ছে না। পাচ্ছে না এই কারণেই অভুক্ত কিছু মানুষের কথা ভেবে। মাস খানেক যাবদ টানা বৃষ্টিতে অনেকের অবস্থা বেহাল।
নীচু জমিতে এক হাঁটু করে জল জমে রয়েছে। বাদাম গাছগুলো জলের তলায় ডুবে রয়েছে। সেগুলোকে হাত বাড়িয়ে বাড়িয়ে তুলে রাখা হয়েছে।
অতএব ফলনের কত অংশ উঠবে তার হিসেব নেই। আবার সেই তুলে রাখা বাদামের অবস্থা কেমন হবে জানা নেই।
পুঁই শাক এবং কলমি শাকের কোনও দেখা নেই৷ সমস্ত সবজি কয়েকদিনের বৃষ্টিতে খারাপ হতে শুরু করেছে।
আমফানের পর দক্ষিণবঙ্গের সাত জেলার অবস্থা শোচনীয়। এখনও নোনা জলের তলায় একাধিক গ্রাম। আমার পক্ষে সেই দৃশ্য দেখা সম্ভব হয়নি। তবে রিপোর্ট অনুযায়ী ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ পাঁচ হাজার কোটি টাকার বেশী।
আমার দেখা এখনও কিছু কাঁচা বাড়ির মেরামত হয়নি। লকডাউনের পর পেট চালাতে অনেকেই সব্জির ব্যবসা শুরু করেছিলেন।
শুধুমাত্র পেটের ক্ষিদে মেটানো ছাড়াও বেশ কিছু মানুষের রোজগারের সন্ধান দেখিয়েছিল কৃষি ব্যবস্থা। আমফানের ঝড়ের তান্ডবে সেগুলো উড়ে গিয়েছে।
এখন চাতক পাখির মত মাসের প্রথমে রেশন এবং একাউন্টের পাঁচশো টাকার দিকে চেয়ে আছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ।
যতক্ষণ মানুষের হাতে টাকা রয়েছে ততক্ষণ সে করোনাকে ভয় পেয়ে রয়েছে। কিন্তু হাতের টাকা ফুরালেই জীবন যুদ্ধে নেমে পড়তে হবে সকলকে। কোনও ইনটিউশন নয়, এটা ভবিষ্যতের আয়না বলতে পারেন।
কিন্তু রাজনৈতিক সুড়সুড়ি আমাদের এই নির্মম সত্যকে লুকিয়ে রাখে। এখন যেটা হতে চলেছে সেটা হল রাজনৈতিক প্রচার। সা
মনে বিধানসভা নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল৷ তা নিয়ে সকলেই প্রস্তুতি শুরু করেছেন। এতদিন ঘরে বসে অনেক ঘাম শুকনো হয়েছে।
এবার কালঘাম ছোটাতে রণকৌশল তৈরী করছে রাজনৈতিক দলগুলি। দলের গুরুত্ব বোঝাতে আপনার দোরগোড়ায় পেয়ে যাবেন রাজনৈতিক নেতাদের।
এই কটা দিন যদি আপনাকে দলের পাঠ গুলে খাইয়ে দিতে পারে তবে তো হয়েই গেল। আপনার অবস্থাও হবে ডুবে থাকা বাদাম গাছের মত। হাতড়ে খুঁজে বের করা বেশ কঠিন।
প্রধানমন্ত্রী মন কি বাত অনুষ্ঠানে বললেন পুর্ব ভারতে কোনও শিল্প না থাকায় সেখানকার মানুষকে অন্য রাজ্যে কাজের সন্ধানে যেতে হয়। কথাটা নির্মম সত্য।
‘থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়’, রাজনীতি আমার সরকার তোর
কিন্তু তার থেকেও নির্মম সত্য একটি প্রশ্ন হল এখন যারা বাড়ি ফিরলেন তাদের জন্য সরকারের কি ভাবনা রয়েছে?
কারণ নির্বাচনী প্রচারে গুজরাট মডেলকে সামনে রেখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী। মডেল তো দূরে থাক একের পর এক সরকারি প্রতিষ্ঠান বেচে সরকার কিনেছেন।
রাজনীতিতে ঘোড়া কেনাবেচা করে এখন সরকারকে নজর দিতে হচ্ছে মনরেগাতে।
আবার বলা হল পিএম কেয়ার ফান্ডে কত টাকা জমা হয়েছে তা জানা যাবে না।
কেন কোনও কাজ করতে গিয়ে ট্রান্সপ্যারেন্সি রাখতে ভয় পাচ্ছে সরকার? উঠছে সে প্রশ্নও।
এখন রাজনীতি মানেই বিরোধীদের তোপ, একে অপরকে তুলোধনা করা। আলাদা করে এগিয়ে আসতে দেখা যাচ্ছে খুব কম রাজনৈতিক নেতাদের৷
উল্টে নিজেদের ভুলে জায়গা করে দিচ্ছেন ক্ষমতাশালীদের৷ গত কয়েক বছরে কৃষকদের মৃত্যুর ছবি আমরা দেখেছি। কিন্তু তারও সরকারী কোনও রিপোর্ট নেই।
একে আমফান রেশ সাঙ্গ হওয়ার আগেই রণে ভঙ্গ দিতে হাজির হয়েছে পঙ্গপাল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ইঙ্গিতে কোনও সাহায্যের কথা জানা গেছে বলে মনে পড়ছে না।
তবে গুমোট গরম থেকে আপাতত স্বস্তি মিললেও, উন্নয়নের জোয়ারে কৃষি ব্যবস্থার কোনও বিকাশ হয়নি।
বরং ঘুর্নিঝড়ে কোথায় উড়ে যেতে দেখা গেল তাদের। সম্ভবতঃ এই আমফান থেকে উঠে দাঁড়াতে কৃষকদেরই আত্মনির্ভর হতে হবে।