বউবাজার এখন ভূত বাজার ! রাজনৈতিক টানাপোড়েনের সাক্ষ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে শূন্য বাড়িগুলি
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ করোনো ( Corona ) আসার আগে বউবাজারের (Bowbazar) দূর্গাপিতুরি লেন সোনা গলি নামে পরিচিত ছিল। টিপিক্যাল উত্তর কলকাতা ধাঁচার পুরনো বাড়িগুলোর ছোটো ছোটো ঘরে দিনরাত চলত গয়না গড়ার কাজ। মালিক-শ্রমিক মিলিয়ে অনেকের পেটের সংস্থান সেখান থেকেই হত।
বাড়ির মালিকরা কেউ সরাসরি সোনার ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন, আবার অনেকে ওই কারবারে ঘর ভাড়া দিয়ে দিব্যি সংসার চালিয়ে নিতেন। কিন্তু করোনার ধাক্কাতে বেশ বেসামাল হয়ে পড়েছিল এই সোনা গলি। পরে দু’বছর আগে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রো রেলের টানেল বোরিং মেশিনের জন্য এলাকায় ধস নামলে গোটা ছবিটা বদলে যায়। সেই ধাক্কা সামলে ওঠার আগে বুধবার রাতে ফের বিপর্যয় নেমে আসে। দূর্গাপিতুরি লেনের যে কটা বাড়ি তখনও মাথা তুলে দাঁড়িয়ে ছিল সেগুলোতেও ফাটল ধরে যায়।
একটা বিষয় পরিষ্কার এবং সমস্ত সরকারি স্তর থেকে মেনেও নেওয়া হয়েছে যে মেট্রোরেলের কাজের জন্য বউবাজারের এই বিপর্যয়। এই বিপর্যয়ে শুধু যে সাধারণ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে তা নয়, রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বরানগরের তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায় নিজেও ফ্ল্যাট ছেড়ে অন্যত্র উঠে যেতে বাধ্য হয়েছে। বুধবার রাতের ধসে তাঁর সেই ফ্ল্যাটেও ফাটল ধরেছে।
এখন সবচেয়ে যে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নটা ঘুরে বেড়াচ্ছে তা হল দু’বছর আগের ঘটনা থেকে তবে কি মেট্রো কোনও শিক্ষা নেয়নি? এক্ষেত্রে রেলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তারা বউবাজারের এই এলাকা দিয়ে মেট্রোকে নিয়ে যেতে চায়নি। এটা ঠিক এর আগে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর রুট অন্যরকম ছিল।
২৩ থেকে ৪৬ জেলা পেতে পারে পশ্চিমবঙ্গ, ইঙ্গিত দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
কার্যত রাজ্য সরকারের জেদাজেদিতেই তারা বউবাজারের এই বিপদসঙ্কুল পথে মেট্রোর কাজ এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে বলে প্রশাসনিক বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে। কিন্তু তাতে মেট্রোরেলের ভূমিকা সাতখুন মাফ হয়ে যায় না। যে কোনও প্রকল্পের নিয়ম হল আগে সেখানকার সয়েল টেস্ট অর্থাৎ মাটির গুণমান পরীক্ষা হবে। তা থেকে প্রযুক্তিবিদরা সিদ্ধান্ত নেবেন সেখানে কিরকম এবং কী ধরনের নির্মাণ কাজ করা যাবে।
স্বাভাবিকভাবেই বউবাজারের এই মেট্রো সেই গাইডলাইন মেনে চলে ছিল কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের ভূমিকা পুরোপুরি হতাশাজনক। কেন যে তারা বউবাজারের তলা দিয়ে মেট্রো আনতে চেয়েছিল সেটা কেউ জানে না।
সবচেয়ে বড় কথা এই বিপর্যয় নিয়ে রেল ও রাজ্য সরকার পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে তোপ দাগতেই ব্যস্ত। স্বাভাবিকভাবে বিষয়টিতে রাজনৈতিক রং লেগেছে। এই বিষয় নিয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক তর্জা হচ্ছে।
কিন্তু বউবাজারের ওই ভিটে হারা মানুষগুলোর ভবিষ্যৎ কী? উত্তর কে দেবে? হোটেলেই কী তাদের বাকি জীবনটা কাটবে? বড় বাড়িতে হাত-পা ছড়িয়ে বসবাস করতেন তাঁরা। কেন এখন হোটেলের ওই ছোট ঘরে তাঁরা থাকবেন তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে। উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসনের বিষয়ে রেলমন্ত্রক ও রাজ্য প্রশাসন কী করেছে তাও স্পষ্ট নয়।
ফলে গোটা বউবাজার ধীরে ধীরে ভুতুড়ে এলাকায় পরিণত হতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। ইতিমধ্যেই দূর্গাপিতুরি লেনের বাড়িগুলো যেন অতীতের কঙ্কাল হয়ে দাঁড়িয়ে সেই সম্ভাবনারই পূর্বাভাস দিতে শুরু করেছে। কলকাতার সোনা পট্টি বলে পরিচিত বউবাজারের বাকি বাসিন্দাদেরও অনেকেই ধীরে ধীরে অন্যত্র ঘরবাড়ির সন্ধান করছেন বলে বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গিয়েছে।