বর্ধমানের রাজনৈতিক ঘরানায় আজও সবুজ শিবিরের আইকন উত্তম সেনগুপ্ত
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ৭০ এর দশকের শেষ দিকে ছাত্র পরিষদের মাধ্যমে রাজনীতির ময়দানে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন সেদিনের যুবক উত্তম সেনগুপ্ত। তারপর তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক আন্দোলনে তাঁর বক্তব্য যুব সম্প্রদায়কে উদ্বুদ্ধ করেছিল। বামেদের লাল চোখের রাঙানি ও সন্ত্রাসের মুখে পড়েছেন বারবার উত্তম সেনগুপ্ত।
তবে সেদিন মেরুদন্ড সোজা রেখে রাজনৈতিক ময়দান থেকে এক ইঞ্চিও সরে আসেনি। নব্বইয়ের দশকে বামফ্রন্ট তখন মধ্যগগনে। বর্ধমানের কংগ্রেসের কাউন্সিলর ছিলেন উত্তম সেনগুপ্ত। চোখে চোখ রেখে বামপন্থীদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে গিয়েছিলেন তিনি।
সেদিন থেকে আজও উত্তম সেনগুপ্ত যে রাজনৈতিক ময়দানে দাঁড়িয়ে আছে সেটা সম্পূর্ণ তাঁর নিজের ক্যারিশমা। তাঁর হাত ধরে আশির দশকে যেসব ছাত্রনেতার রাজনীতির ময়দানে আগমন হয়েছিল আজও মনে রেখেছেন সেকথা অনেকে। আবার ব্যতিক্রমও আছে।
বর্তমান সময়ে রাজনীতির চরিত্র পাল্টে গিয়েছে। পরিবর্তন হয়েছে অনেক রাজনীতিবিদদের। তবে এখনো কোন পরিবর্তন চোখে পড়েনি উত্তম সেনগুপ্তের। তাঁর তথ্যভিত্তিক রাজনৈতিক বক্তব্য আজও গুণমুগ্ধ করে দক্ষিণপন্থী আন্দোলনের ছাত্রদের।
রাজ্যসভায় দেখা যেতে পারে সৌরভ বা ডোনাকে, বাংলা জয়ে নতুন ছক বিজেপির
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে রাজনৈতিক পরিচিতি ও পরিস্থিতি পাল্টে যায়। যুব কর্মীদের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা বরাবরই ছিল। দীর্ঘ লড়াইয়ের পর ২০১১ সালে যখন তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় ফেরে সেদিনও উত্তম সেনগুপ্ত যা ছিলেন আজও একইরকম।
বিভিন্ন সময় দল তাঁকে রাজনৈতিক ভাবে গুরুত্ব দিয়েছে। তবে তাঁর মত দক্ষ সংগঠক অবশ্যই বর্ধমান বিধানসভা কেন্দ্রে খুব কম লোকের আছে, একথা অনেকেই স্বীকার করেন। ২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী হন তিনি। বর্ধমান জেলা পরিষদের পূর্ত ও পরিবহন দপ্তরের কর্মাধক্ষ্যের দায়িত্ব সামলাচ্ছেন দীর্ঘদিন। তখন বর্ধমান জেলা ভাগ হয়নি। এখন বর্ধমান জেলায় বিভক্ত দুইভাগে। একদিকে পশ্চিম বর্ধমান। অন্যদিকে পূর্ব বর্ধমান।
তৃণমূল কংগ্রেসের বিভিন্ন সময়ে নির্বাচনে তাঁকে দেখা গেছে অর্জুনের ভূমিকায়। ২০১৪ হোক বা ২০১৯, দায়িত্ব পালন করেছেন বারবার। । এখান থেকে হতাশা গ্রাস করছে কর্মীদের মনে। তাদের দাবি, উত্তম সেনগুপ্তকে দলের বিধানসভা ভিত্তিক দায়িত্ব দেওয়া হোক। এতে মজবুত হবে দল। যদিও এই বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে নারাজ উত্তম সেনগুপ্ত।
তিনি বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যা ঠিক করবেন সেই নির্দেশ পালন করবেন। ব্যক্তি উত্তম সেনগুপ্ত এখানে কোন ম্যাটার নয়। তাই দায়িত্ব দিয়েছেন অতীতেও, বর্তমান যেখানে দাড়িঁয়ে তার কৃতিত্বও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। ভবিষ্যতে যে দায়িত্ব দল দেবে তা পালন করতে বদ্ধপরিকর তিনি।
দীর্ঘ ৪৬ বছরের রাজনৈতিক জীবন। বহু মানুষের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হওয়াতে অভিজ্ঞতাও বিরাট। সেক্ষেত্রে পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁর মতামত গুরুত্ব পাবে তা নিঃসন্দেহে স্পষ্ট।
তিনি বলেন, “আমাদের কাছে মূল স্লোগান হলো উন্নয়ন। দুর্নীতি কোন ভাবে আপস নয়। আমরা মনে করি গ্রামের উন্নয়ন, গ্রামের বিকাশ রাজ্যের পরিকাঠামোর দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গ্রামের পানীয় জল এবং বাড়ির উঠোন থেকে পাঁচমাথা মোড় পর্যন্ত পাকা রাস্তা আমরা সবসময় করে আসার চেষ্টা করছি। যদি হিসেব করে দেখেন ২০১৮ সাল থেকে আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর আমার যতটুকু দায়িত্ব ছিল নেত্রীর নির্দেশ মত তা পালন করেছি। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমরা মানুষের কাছে পরিষেবা পৌঁছে দিতে পারলে ২০২৪ সালের লোকসভার মহারণে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমরা দেশের প্রধানমন্ত্রীর লড়াইয়ে এগিয়ে দিতে পারব।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সামনে রেখে আগামী দিনে পঞ্চায়েতের লড়াইটা হবে একথা স্পষ্ট করে দিয়েছেন উত্তম সেনগুপ্ত। উন্নয়নের যার মূলমন্ত্র। বিরোধীরা এখানে কোন সমস্যা নয়।