সিএএ-আইএলপি ইস্যুতে দু’পক্ষের সংঘর্ষে শিলঙে হত এক, জারি অনির্দিষ্টকালীন কারফিউ, বাতিল ইন্টারনেট

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্ক : নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিটিজেনশিপ অ্যামান্ডমেন্ট অ্যাক্ট (সিএএ) এবং ইনারলাইন পারমিট (আইএলপি) ইস্যুতে জনজাতি খাসি সম্প্রদায়ের সঙ্গে অ-জনজাতি সম্প্রদায়ের তুমুল সংঘর্ষে উত্তাল হয়ে উঠল মেঘালয়ের রাজধানী শিলঙের ইছামতি এলাকা।

যার জেরে শনিবার বেলা ১২টা থেকে শিলঙে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করল প্রশাসন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কারফিউ জারি থাকবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

সূত্রের খবর, শুক্রবার  বিকেলে ইছামতিতে সিএএ-র বিরুদ্ধে এবং আইএলপি প্রয়োগের দাবিতে একটি সভা করে খাসি স্টুডেন্টস ইউনিয়ন। এই সভার পরই খাসি পড়ুয়াদের সঙ্গে অ-জনজাতিদের সংঘর্ষ শুরু হয়ে যায়।

স্থানীয় বাজারের কাছে একটি খড়ের গাদায় আগুন ধরিয়ে দেয় খাসি পড়ুয়ারা। একটি বাড়িতেও আগুন লাগানোর চেষ্টা করে। অন্যদিকে, এর পাল্টা অ-জনজাতিরা পাথর ছোঁড়ে খাসি পড়ুয়া ভরতি একটি বাসে।

আরও পড়ুনঃ দিল্লি নিয়ে অযথা রাজনীতি করবেন না, মমতাকে বার্তা বাবুলের

দু’পক্ষের এই সংঘর্ষে চারজন খাসি পড়ুয়া আহত হয়। খাসি পড়ূয়াদের আনতে গিয়ে আক্রান্ত হয় একটি ট্যাক্সি ও তার চালক। ভাঙচুর করা হয় গাড়ি।

পাশাপাশি কয়েকজন পুলিশ আধিকারিকও জখম হন। যদিও এই আক্রমণ ও পাল্টা আক্রমণের উদ্দেশ্য এখনও জানা যায়নি।সংঘর্ষে জখম ট্যাক্সিচালকের মৃত্যুর পর গোলমাল আরও ছড়িয়ে পড়ে।

পুলিশ জানিয়েছে, ওই ট্যাক্সিচালকের নাম লুরসাই হাইন্নিয়েতা।তাঁর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়তেই সংঘর্ষ আরও বেড়ে যায়। আইনশৃঙ্খলার চুড়ান্ত অবনতিতে পূর্ব খাসি পার্বত্য জেলার জেলাশাসক কারফিউ জারি করেন।

রাত ১০টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত লাগু করা হয় কারফিউ।সেই সঙ্গে ১০ জেলায় মোবাইল-ইন্টারনেট পরিষবা বাতিল করা হয়।এখনও পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে রয়েছে।

কেন্দ্রীয় সরকার নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ আনার পর সারা দেশের পাশাপাশি এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু হয় উত্তরপূর্ব ভারতে।কারণ, বহিরাগতরা এসে বসবাসের ফলে তাঁদের অস্তিত্ব বিপন্ন করে তুলছে, এই অভিযোগে বহুদিন ধরেই সরব উত্তরপূর্বের ভূমিপুত্ররা।এর বাস্তবতাও রয়েছে। উত্তরপূর্বের কোথাও কোথাও ইতিমধ্যেই সংখ্যালঘু হয়ে পড়েছে ভূমিপুত্ররা।

ফলে কেন্দ্র এই আইন আনার পর উত্তরপূর্বে ব্যাপক আন্দোলন হয়। সিএএ-র বিরুদ্ধে উত্তাল হয়ে ওঠে মেঘালয়ও। যার জেরে ডিসেম্বরে বাতিল করতে হয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের শিলঙ সফর।মেঘালয়ে খাসি জনজাতি মানুষ  রাজ্যে সিএএ লাগু না করার দাবি তোলেন।

আরও পড়ুনঃ সরকার পোষিত দাঙ্গা ‘দিল্লি’ হতে পারে বাংলায়, আশঙ্কা তথ্যাভিজ্ঞ মহলের একাংশের

পাশাপাশি সে রাজ্যে বহিরাগতদের প্রবেশের ক্ষেত্রে ইনার লাইন পারমিট বা আইএলপি প্রয়োগের দাবি জানান। কেএসইউ-র কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি লাম্বোক্সতারোয়েল মার্নগার সংবাদমাধ্যমকে জানান, সিএএ-র বিরুদ্ধে এবং আইএলপি প্রয়োগের দাবিতে তাঁদের সভা ছিল।

শান্তিপূর্ণ সভার পর কয়েকজন ‘বহিরাগত’ তাঁদের উপর হামলা করে।উল্লেখ্য, এখনও অশান্ত রয়েছে গোটা এলাকা।যার ফলে রাত ১০টা থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত কারফিউ বলবত রয়েছে। সেই সঙ্গে পূর্ব জয়ন্তিয়া, পূর্ব খাসি, পশ্চিম জয়ন্তিয়া, দক্ষিণ পশ্চিম খাসি, পশ্চিম খাসি পার্বত্য এলাকা ও রিভোই এলাকায় মোবাইল-ইন্টারনেট পরিষেবা বাতিল করা হয়েছে।

এসএমএস পরিষেবাতেও জারি করা হয়েছে বিধিনিষেধ। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পর কারফিউর সময়সীমা আরও বাড়ানো হতে পারে বলে গতকালই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা।

সর্বশেষ পাওয়া খবর, এদিন অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি হয়েছে শিলঙে।

সম্পর্কিত পোস্ট