গাছে কাঁঠাল গোঁফে তেল….

শুভজিৎ চক্রবর্তী

মালদ্বীপ থেকে একটি ‘মাল’ এসেছে। মালের owner তমাল মাল(কাল্পনিক)। যা কিনতে তাঁর মোটা অঙ্কই খরচ হয়েছে।
কিন্তু মালটি আসার পর থেকেই গোলমাল শুরু হয়েছে। তমাল রাতারাতি মালামাল হয়ে গিয়েছে। সবাইকে মালপোয়ার ট্রিট দিচ্ছে। তা দেখে মাল পাড়ার দাদা বেজায় চটেছে। রীতিমত হুমকি দিয়ে বলতে শোনা গেছে যদি চাইনিজ মাল বের হয়, মালটাকে(পড়ুন তমাল) দেখে নেবে বলেছে।

কথায় কথায় আমরা যে কোনও কিছুকে পরখ করি ওই দেশের প্রসাধন হিসেবে। না টিকলে চায়না মাল। নাহলে ব্র্যা ন্ডেড। এখন সে গুড়ে বালি।

গল্পের আঁচড়ে কবিতা, শের অউর শায়েরি লেখা ভারতীয়- সবাই একজোট হয়েছে চাইনিজ দ্রব্য বর্জনে। চিন নিয়ে চুলোচুলি করতে গিয়ে চায়ের দোকানের বিল ক্রমশ চওড়া হয়ে যাচ্ছে। হবে নাই বা কেন? গালওয়ানে যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে রাগ হওয়াটা স্বাভাবিক। আমারই তো শুনে মাথার উত্তাপ গনগনে আগুনের মত হয়ে গিয়েছিল।

কিন্তু রাতারাতি যদি চিনা দ্রব্য বর্জন করতে হয় তাহলে সেটা ডিফিকাল্ট ব্যাপার। তবে মাথায় যেহেতু ঢুকেছে আমরা করেই ছাড়বো। এটা আমাদের কাছে চ্যালেঞ্জ।

Exclusive: সুন্দরবনে বাঁধ সমস্যার পাকাপাকি এবার বিশ্ব ব্যাংকের সাহায্য নেবে রাজ্য

আরও চ্যালেঞ্জিং ব্যাপার হল, এত তাড়াতাড়ি আমরা পারব না। কারণ আমাদের দেশের সেই পরিকাঠামো নেই। আমি এর জন্য সরকারকে দোষ পুরোটা দিতে পারিনা।

কারণ যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে টেকনোলজি এতটা ফাস্ট ফরোয়ার্ড হয়ে গিয়েছে যে আমাদের নিত্যনতুন টেকনোলজির জিনিসপত্রের তড়িঘড়ি দরকার হয়ে পড়ে।

মাইক্রোএসডি কার্ড থেকে শুরু করে, কার্ভ টিভি পুরো ব্যাপারটাতেই আমাদের মাথা কিনে নিয়েছে চিনা দ্রব্য।
এখন তো অনলাইনে জানা যায় কোন জিনিস কোন দেশে লঞ্চের কত পরে আমাদের দেশে তাদের ব্যবসা শুরু করবে।

তবে কি আমরা পারি না কোনও জিনিস আমাদের দেশে প্রথম ইনভেন্ট করতে?

হ্যাঁ। আলবাত পারি। তবে সেটা সময় লাগবে। আমাদের মজ্জায় মজ্জায় যেভাবে চায়না ট্যাগ লেগে রয়েছে তা ঘোচাতে বেশ সময় লাগবে।

এই তো দেখছেন আমফানের নাম করে কত জন ফ্রিতে ঘর সারানোর টাকা পেলেন। অথচ তাঁদের ঘর কাঁপলোও না। ঝনঝনও করল না। অথচ সুবিধেটা এনারাই পেলেন। রাজনীতির ভাষায় কি এদের চায়না মাল বলা চলে?

তাহলে আমরা যদি কম টাকায় মাল্টি ফিচার্স কিছু পাই হাতছাড়া করব কেন? সত্যি কথা বলতে কি মাসে যা মাইনে মেলে তাতে কিছু বাঁচে না। অগত্যা নেই মামার থেকে কানা মামা ভালো।

আগে ফোন না উইজ করাটা ছিল গুড হ্যাবিট। এখন সেটা কোন হ্যাবিটে দাঁড়িয়েছে জানিনা। তবে এখনের দিনে ফোন না ব্যবহার করার ফলে নিজেকে ডায়নোসরের প্রজাতি বলে মনে হয়। কত কিছু হয়ে গেল, সব কিছু থেকেই বাদ পড়ে গেলাম।

যাই হোক এসব বাদ দিয়ে মূল কথায় আসি। আমাদের দেশে শিল্পের যে পরিকাঠামো রয়েছে তা দিয়ে এক্ষুনি সব ছেড়ে বনবাসে যাওয়া সম্ভব নয়। আশা দেখা দিতে পারে।

অর্জুনের লক্ষ্য-ভেদঃ যুবশক্তি কর্মসূচীতে যুব সমাজের সাড়ায় আপ্লুত অভিষেক

করোনার শুরুতে বিশেষ করে লকডাউন চলাকালীন কানাঘুষো শুনেছিলাম ভারতে কিছু আমেরিকান কোম্পানি ব্যবসা করতে চান। সেটা ভারতের জন্য ভালোই হবে।

পাশাপশি শিল্পে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ভারতীয় কোম্পানিগুলিকে আরও নজর দিতে হবে। সরকারী প্রতিষ্ঠানের বিক্রয় বন্ধ করতে হবে।
তবে তার আগেও দরকার পেট্রোল-ডিজেলের দামকে নিয়ন্ত্রণ করা। নাহলে একটা বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার আগে আরও এক বিপদ ঘনিয়ে আসবে।

তাই পাড়ার দাদাদের কাছে আবেদন আমফান বা রেশন দুর্নীতির যারা করছে তাঁদের পরখ করে নিন। নাহলে ন্যানোর মত একলাখি প্রোজেক্ট কেন, ১০০ টাকার ফোন কভারের কোম্পানিও আপনার কাছে আসবে না।

তাই অযথা জিনিসপত্র না ভেঙে সুস্থ মাথায় চিন্তা করুন। ক্ষতিটা কোথায়?

সম্পর্কিত পোস্ট