করোনা, বুজরুকিতে নয় আস্থা রাখুন চিকিৎসায়

 ||পার্থ প্রতীম বিশ্বাস আইনজীবী, বারাসাত কোর্ট ||

ভাইরাস ঘটিত রোগটা বিদেশী হলেও আপাতত আমাদের ঘরের ভেতরে ঢুকে পড়েছে। সরকার আমজনতাকে সতর্ক হতে বলছে, অথচ খোদ সরকারি অফিসারের ছেলেই সে কথা মানতে চায়নি। যদিও এই মুহুর্তে সে হাসপাতালে। তবে সেখানে যাওয়ার আগে পর্যন্ত সে কাকে কতটা বিষাক্ত করেছে তার হিসাব এখনও পাওয়া যায়নি।

তবে এটাই একমাত্র ঘটনা ভাবলে ভুল হবে। নিয়মিত বিদেশ থেকে মানুষ ফিরছেন। তাদের তালিকা ধরে সতর্কতা ও চিকিৎসার আওতায় আনলে বাকী নাগরিকদের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা ছাড়া রোগগ্রস্ত হওয়ার ভয়টা প্রায় থাকতোই না।

কিন্তু সে আর হলো কই?

আরও পড়ুনঃ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা, ভারতে ১৪৭

মুখে পশুপ্রেমের কথা বলে বাস্তবে কুকুরের ল্যাজে কালীপটকা বেঁধে তাতে আগুন লাগিয়ে মজা দেখা চলছে। বড়লোকদের রোগবাহক সন্তানরা হয়তো দ্রুত চিকিৎসার সুযোগের আওতায় আসতে পারবেন, কিন্তু বিশাল গরীব জনতার সন্তানরা সে রোগ দ্বারা সংক্রামিত হলে আদৌ সবটা বুঝে ওঠার সময়টুকু পাবেন কিনা, তাদের দ্বারা আরও কত মানুষ অকারণে রুগী হয়ে উঠবেন, সেসব কিন্তু এখনও বোঝা যাচ্ছে না।

ওদিকে রাজ্য ও দেশের সীমানাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস আসা বন্ধ হয়েছে। এর ফলে সৃষ্টি হচ্ছে খাদ্য সমস্যা। সব থেকেও ‘আমরা যে আবারও আকালের কবলে পড়বো না’ তার কোনও নিশ্চয়তা নেই।

কার্যত এই রোগকে কেন্দ্র করে চরম  অনিশ্চয়তা তৈরী হয়েছে। এর ফলে ভেঙে পড়তে চলেছে মানুষের জীবনযাপন। নোটবন্দী, জিএসটি, ব্যাঙ্ক লুঠ সহ নানা কারণে এমনিতেই দুর্বল হয়ে পড়া দেশের অর্থনীতিতে এই রোগ যদি কফিনের শেষ পেরেক হয়, তাহলে এর থেকে মুক্তির উপায় কি?

কঠিন এই পরিস্থিতিতে যে শিক্ষাটা আমরা প্রতি মুহুর্তে পাচ্ছি, তা হলো, আল্লা ভগবান গড ও তাদের স্বঘোষিত চেলা বা ভক্তরা আদতে চুড়ান্ত অসহায় এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক বা রাজনৈতিক, কোনও রোগ সারানোর ক্ষমতাই তারা রাখেন না। বরং আমরাই আদর ও প্রশ্রয় দিয়ে ওদের বাঁচিয়ে রাখি।

যদিও এসব থেকে মুক্তি ঘটলেই ধর্ম বেওসায়ীরা আবারও ধর্মের নামে বুজরুকি শুরু করবে। কিন্তু আপাতত মানুষকেই তার মুক্তির উপায় খুঁজতে হবে। প্রথমে রোগ থেকে মুক্তি, তারপর এই অপদার্থ শাসন থেকে।

মারণ রোগ থেকে কোনওক্রমে বাঁচলেও ভাবের ঘরে চুরি করা এই অপদার্থদের হাত থেকে বাঁচার রাস্তায় না হাঁটলে অদুর ভবিষ্যতে আর কোনও রোগ লাগবে না, শাসকের চুড়ান্ত অপদার্থতাই সুস্থ মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে।

আরও পড়ুনঃ#CoronaVirusUpdate,করোনার সেকেন্ডহোম ইতালি, দেশবাসী মজেছে ইন্টারনেটে

তাই, আশ্বস্থ না থেকে আপাতত সতর্ক থাকুন। ডাক্তারবাবুদের নির্দেশ মতো রোগগ্রস্ত না হওয়ার জন্য সবরকম সতর্কতা অবলম্বন করুন।

মনে রাখবেন, যে কোনও শারীরিক রোগ থেকে বাঁচতে একমাত্র বিজ্ঞান তথা চিকিৎসক ও সমগোত্রীয় পেশার মানুষই আমাদের ত্রাতা। কোনওরকম বুজরুকিতে বিশ্বাস করবেন না, অন্যকেও এসব থেকে সাবধান করবেন।

আজকের এই দুঃসময়ে ধর্ম বেওসায়ীই হোক অথবা সরকারের কেষ্টবিষ্টু, যিনি বা যারা আমাদের ভুল পথে পরিচালিত করতে চাইছেন বা করছেন, তাদের চিরতরে তরী পার করার দায়িত্বটা কিন্তু আপনারও।

সম্পর্কিত পোস্ট