শীতলকুচিতে বিক্ষোভের মুখে রাজ্যপাল- দেখানো হল কালো পতাকা, উঠল গো ব্যাক স্লোগান
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ভোট পরবর্তী হিংসা কবলিত এলাকা পরিদর্শনে এসে সাধারন মানুষের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন রাজ্যপাল। তাঁকে কালো পতাকা দেখালেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শোনা যায় ‘গো ব্যাক’ স্লোগানও।
এদিন মাথাভাঙ্গা ও শীতলকুচিতে ভোট পরবর্তী রাজনৈতিক হিংসা কবলিত এলাকা পরিদর্শন করতে আসেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। মাথাভাঙ্গা ১ নং ব্লকের ছট খাটেরবাড়ি এলাকা পরিদর্শন করে শীতলকুচির দিকে রওনা দেন।
শীতলকুচি যাওয়ার পথে মাঝরাস্তায় জোরপাটকী এলাকায় ফাঁকা রাস্তায় জোরপাটকী নাগরিক মঞ্চ নাম দিয়ে একটি সংগঠন রাজ্যপালকে কালো পতাকা দেখান। সেসময় গাড়িতে রাজ্যপাল ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন, সাংসদ নিশীথ প্রামানিক। মাথাভাঙার বিধায়ক সুশীল বর্মন, বরেন চন্দ্র বর্মন, তুফানগঞ্জের বিধায়ক মালতি রাভা প্রমুখ।
উল্লেখ্য, গত ১০ এপ্রিল সেই জোরপাটকিতেই কেন্দ্রীয় বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারিয়েছিলেন চার তরতাজা যুবক। আর এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য ও দেশের রাজনীতি।
ঘটনায় কাঠগড়ায় দাড় করানো হয়েছিল বিজেপির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্বকে। এই মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিরুপ মন্তব্যে নিজেদের জড়িয়েছিলেন দিলীপ ঘোষ থেকে শুরু করে রাহুল সিনহা ও সায়ন্তন বসুরা। বাদ যাননি রাজ্যের রাজ্যপালও।
হয়ত সেই প্রভাবই পড়ল আজ তাঁর মাথাভাঙ্গা ও শীতলকুচি সফরে। এত নিরাপত্তা ঘেরাটোপে কিভাবে কালো পতাকা দেখানো হল? বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়ে গেছে বিভিন্ন মহলে। যদিও এ ব্যাপারে কারও কোন প্রতিক্রিয়া মেলেনি।
এদিন কোচবিহারে পা রেখেই ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের জেরে অসমে আশ্রয় নেওয়া বাংলার বাসিন্দাদের ফিরে আসার আবেদন জানিয়ে তাঁদের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনে নিজের বুকে গুলি খাবেন বলে জানান রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়।
এদিন বেলা সাড়ে ১২ টা নাগাদ বিএসএফের হেলিকপ্টারে কোচবিহার বিমান বন্দরে এসে নামেন রাজ্যপাল। তাঁর সাথে ছিলেন সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক। তিনি কোচবিহার বিমান বন্দরে নেমেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে রাজ্যের বিরুদ্ধে একের পর এক তোপ দাগতে শুরু করেন। প্রশ্ন তোলেন মানবাধিকার সংগঠন ও সংবাদ মাধ্যমের ভূমিকা নিয়েও।
রাজ্যপাল অসমে আশ্রয় নেওয়া ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের শিকার বাংলার বাসিন্দাদের নিজ রাজ্যে ফিরে আসার আবেদন জানান। শুধু তাই নয়, আগামীকাল তিনি অসমে আশ্রয় নেওয়া বাংলার বাসিন্দাদের ওই ত্রাণ শিবির গুলোতে গিয়ে কথা বলবেন বলেও জানিয়েছেন।
রাজ্যপাল বলেন, “অসমে ওই ত্রাণ শিবির গুলোতে আশ্রয় নেওয়া সন্ত্রাসের শিকার বাংলার বাসিন্দারা সেখানে আমার যাওয়ার খবর পেয়েই অনেকটা আশ্বস্ত হয়েছেন। তাঁদের মনোবল বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামীকাল সেখানে যাবো। তাঁদের আবেদন জানাবো বাংলায় ফিরে আসার জন্য। প্রয়োজনে তাঁদের নিরাপত্তার জন্য নিজের বুকে গুলি খাবো।”
এখানেই শেষ নয়, তিনি কিছুটা আবেগ প্রবণ হয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন তুলে দিয়ে বলেন, “পশ্চিমবঙ্গে কিনা হচ্ছে, বলতে কষ্ট হচ্ছে আমার। কোথায় গেল সেই সব মানবাধিকার সংস্থা? কোথায় সংবাদ মাধ্যম? আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি তাঁদের।”
শীতলখুচির প্রসঙ্গ তুলে ধরে রাজ্যপাল বলেন, “কোচবিহারের সেই ঘটনা হতেই মুখ্যমন্ত্রী বলে দিলেন নরসংহার, ঠাণ্ডা মাথায় খুন। অথচ এখানকার বিভিন্ন প্রান্তে অন্য ঘটনা ঘটছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যা করা হচ্ছে, এর বিরুদ্ধে দেশ দুনিয়ায় যারা বাংলা নিয়ে উদ্বেগে রয়েছেন। তাঁদের অনুরোধে সিধান্ত নিয়েছি আমি যাবো। সংবিধান বাঁচাতে, রাজ্যপাল হিসেবে দেশকে বাঁচাতে যত বাধাই আসুক না কেন, তাতে আমি প্রভাবিত হব না।”
করোনা পরিস্থিতি দেশ ও রাজ্যের ক্ষেত্রে যেমন উদ্বেগজনক হয়ে দাঁড়িয়েছে। একইভাবে বাংলায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসাও মারাত্মক আকার নিয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজ্যপাল। তাঁর কথায় “কিছু লোকের সাহস কি করে হয় আইন হাতে তুলে নেওয়ার? মুখ্যমন্ত্রী এব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়ার আবেদন জানিয়েছিলাম। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেরকম সদর্থক কোন ভূমিকা গ্রহণ আমার চোখে পড়েনি।”