#HathrasTruthExposed: সাসপেন্ড ৫ পুলিশ কর্মী, সত্য উদঘাটনের অপেক্ষায় গোটা দেশ
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে নির্যাতিতার মৃত্যু ঘিরে উত্তাল গোটা দেশ। পরিবারের অনুপস্থিতিতে নির্যাতিতার দেহ দাহ করার অভিযোগ উঠেছে উত্তরপ্রদেশের বিরুদ্ধে। ঘটনায় সিট(বিশেষ তদন্তকারী দল) গঠন করেছে যোগী সরকার। এদিন সিটের সদস্যরা দীর্ঘক্ষণ ধরে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। আগামী ৭ দিনের মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে বলে জানা গেছে।
১৪ সেপ্টেম্বর হাথরস এলাকায় বাড়ির কাছেই একটি জমিতে মা ও ভাইয়ের সঙ্গে জমিতে ঘাস কাটতে গিয়েছিলেন বছর ১৯ এর মনীষা বাল্মীকি। কাজ করতে করতে আচমকাই কয়েকজন যুবক মেয়েটিকে আক্রমণ করে। গলায় ওড়না পেঁচিয়ে টানতে টানতে একটি বাজরা খেতের মধ্যে নিয়ে গিয়ে মেয়েটির উপর নৃশংস অত্যাচার চালানোর পাশাপাশি তাঁকে গণধর্ষণ করা হয়। পরে মেয়েটির মা খুঁজতে খুঁজতে মনীষাকে উদ্ধার করেন অচৈতন্য অবস্থায়।
আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের জওহরলাল নেহরু মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা চলছিল তাঁর। অবস্থার উন্নতি না হওয়ায় স্থানান্তরিত করা হয় দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে। সেখানেই ২৯ সেপ্টেম্বর ১৫ দিনের লড়াইতে হেরে যান উত্তরপ্রদেশের গণধর্ষিতা ওই তরুণী।
ঘটনার প্রথম থেকেই পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে নির্যাতিতার পরিবার। নির্যাতিতার পরিবারের তরফে জানানো হয় প্রথম দিন অভিযোগই নিতে চায়নি পুলিশ। ঘটনা ঘটার ৪-৫ দিন পর তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
মঙ্গলবার(২৯ সেপ্টেম্বর) রাত ১০ টা নাগাদ দিল্লির সফদরজং হাসপাতাল থেকে নির্যাতিতার দেহ ছাড়া হয়। দেহটি হাথরাসে পৌঁছলে, মেয়েটির পরিবার, আত্মীয়-স্বজন এবং গ্রামবাসীরা পুলিশকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। বিচার না পাওয়া পর্যন্ত মেয়েকে দাহ করবেন না বলে জানিয়ে দেন তাঁরা। কিন্তু পরিবারের তরফে অভিযোগ, দেহটি রাতেই দাহ করার জন্য চাপ দিতে থাকে পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে খবর, এর পরই নির্যাতিতার পরিবার সহ আত্মীয়-স্বজন এবং গ্রামবাসীদের তালাবন্ধ করে রেখে, দেহটি নিয়ে শ্মশানের উদ্দেশে বেরিয়ে পডে় পুলিশ। রাত পৌনে তিনটে নাগাদ নির্যাতিতার সৎকার করে ফেলে তারা।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেয়েটির দাদা বলেন, ‘‘জোর করে বোনের দেহ তুলে নিয়ে যায় পুলিশ। শ্মশানে তুলে নিয়ে যায় আমার বাবারকেও। বোনের দেহ এক বার বাড়ির ভিতরে নিয়ে আসতে চাই বলে অনুরোধ করেছিলাম পুলিশকে। কিন্তু তা-ও করতে দেওয়া হয়নি।’’ পুলিশ যদিও এই অভিযোগ খারিজ করেছে।
১ অক্টোবর নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে হাথরাসের উদ্দেশ্য রওনা দেন রাহুল গান্ধী ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। হাথরাসের পথে গ্রেফতার করা হয় রাহুল গান্ধীকে। এই ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে গোটা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পথে নামে কংগ্রেসর কর্মী সমর্থকরা।
দিনভর এই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই ২ অক্টোবর হাথরাসের উদ্দেশে রওন হন তৃণমূল সাংসদরা। বাধা দেওয়া হয় তাদেরও। এমনকি এদিন নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে বাধা দেওয়া হয় সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদেরও।
রাতারাতি হাথরাসের বুলগড়হী গ্রামটিকে দুর্গ বানিয়ে ফেলা হয়। পুলিশ কর্মীদের কথায় সংবাদমাধ্যম তো বটেই সেইসঙ্গে বাইরের কাউকেই গ্রামে ঢুকতে না দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে উপরমহল থেকে। তবে এই উপরমহল বলতে কাকে নির্দেশ করা হয়েছে তা স্পষ্টভাবে সামনে এল না। বরং উপরমহলের অর্ডার দেখতে চেয়ে একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধি লড়াই চালিয়েও সুরাহা করতে পারলেন না।
এখানেই সবকিছু থেমে থাকেনি। বরং বাতাসে ভাসিয়ে দেওয়া হল করোনা আক্রান্তের কথা। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়, সিটের কাজে সমস্যা হতে পারে, তাই সংবাদমাধ্যমকে যেতে বারণ করা হচ্ছে। কোনও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে অনুমতিও দেওয়া হচ্ছে না বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
এই ঘটনায় বিজেপি নেত্রী উমা ভারতী অসন্তোষ প্রকাশ করেন। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের উদ্দেশে ট্যুইটারে তিনি লেখেন, “পুলিশ যা আচরণ করছে, তাতে বিজেপির ভাবমূর্তিতে প্রভাব পড়ছে। সংবাদমাধ্যমকে এবং অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাদের নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে দিন। আমি আপনার চেয়ে বয়সে বড়। আপনার বড় দিদির মতো। আশা করি আমার অনুরোধ আপনি রাখবেন।”
তবে পুলিশের চোখ এড়িয়ে বাড়ি থেকে রীতিমত পালিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন নির্যাতিতার ভাই। তার কথায়, প্রায় ২০০ পুলিশ তাঁদের বাড়ি ঘিরে রেখেছে। তাঁর অভিযোগ, নির্যাতিতার বাবাকে মারধরও করা হয়েছে এবং সবাইকে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে মানা করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, পরিবারের সদস্যরা সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে চান।
পরিস্থিতি ক্রমশ হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে আসরে নামেন যোগী আদিত্যনাথ। এদিন দুপুরে উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ট্যুইট করে বলেন, উত্তরপ্রদেশে মা-বোনদের সম্মানহানির চেষ্টা করলে তাদের বিনাশ নিশ্চিত। ওদের এমন শাস্তি দেওয়া হবে যা ভবিষ্যতে উদাহরণ তৈরি করবে। উত্তরপ্রদেশ সরকার মা-বোনেদের সুরক্ষা ও উন্নয়নে সংকল্পবদ্ধ সরকার।
গোটা ঘটনায়, উত্তরপ্রদেশের পুলিশের ভূমিকা নিয়ে তোলপাড় আলোড়ন শুরু হয় গোটা দেশ জুড়ে। নড়েচড়ে বসে যোগী সরকার। এদিন সন্ধেবেলা জানা যায়, হাথরাস কাণ্ডে ডিএম, এসপির ভূমিকা নিয়ে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে। প্রয়োজনে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে উত্তরপ্রদেশ সরকার।
হাথরাস কাণ্ডের প্রতিবাদে গর্জে ওঠে দিল্লি। এদিন যন্তরমন্তরে জড়ো হন অন্তত পাঁচশো মানুষ। সেই প্রতিবাদে সামিল ছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল, ভীম আর্মির প্রধান চন্দ্রশেখর আজাদ, সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি।
জানা গেছে হাথরাসের দলিত তরুণীর উপর হওয়া নির্যাতনের প্রতিবাদে ইন্ডিয়া গেটে জড়ো হবেন সকলে,এমনি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পুলিশ অনুমতি দেয়নি। তাই যন্তরমন্তরে শুরু হয় প্রতিবাদ, জানান চন্দ্রশেখর আজাদ। ১০০ জনের বেশি উপস্থিত থাকতে পারবেন না বলে জানিয়েছিল দিল্লি পুলিশ। শেষ পর্যন্ত দেখা গেল অন্তত ৫০০ জন উপস্থিত হলেন।
অবশেষে, বিরোধীদের তুমুল সমালোচনা, সাধারণ মানুষের প্রতিবাদ, সংবাদ মাধ্যমের কটাক্ষের মুখে চাপে পড়ে হাথরস কাণ্ডে এসপি, ডিএসপি সহ পাঁচ পুলিশকর্মীকে সাসপেন্ড করল যোগী সরকার। সিট (বিশেষ তদন্তকারী দল)–এর রিপোর্টের ভিত্তিতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ।
সিট–এর প্রাথমিক রিপোর্টে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, অভিযুক্তদের পাশাপাশি সাসপেন্ড হওয়া পুলিশ কর্মী এবং নির্যাতিতার পরিবারেরও লাই ডিটেক্টর (নার্কো অ্যানালিসিস) টেস্ট করানোর। রিপোর্টে সাসপেন্ড হওয়া পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ আনা হয়েছে। তার জেরেই সাসপেন্ড বলে জানা গেছে।