দিল্লি দাঙ্গার নিন্দা, শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অধিকার সুরক্ষায় আবেদন বিজ্ঞান গবেষক-পড়ুয়াদের
আইআইএসসি-র গবেষক ও পড়ুয়ারা তাঁদের বিবৃতিতে বলেন, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি এবং বিশেষ করে দিল্লির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
দ্য কোয়ারি ডেস্ক : দিল্লি দাঙ্গার তীব্র নিন্দা করলেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স (আইআইএসসি)-এর ৩০০ গবেষক ও পড়ুয়া।
এক বিবৃতিতে দিল্লিতে দাঙ্গার তীব্র নিন্দা করেছেন তাঁরা।মানুষের জীবন ও সম্পত্তি রক্ষায় ভারত সরকার ব্যর্থ বলেও ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত পাওয়া খবর অনুযায়ী দিল্লি দাঙ্গায় মৃতের সংখ্যা ৩৮ এবং জখম হয়েছেন ২০০-র বেশি মানুষ।
সপ্তাহের শুরুতে উত্তরপূর্ব দিল্লির জাফরাবাদে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিরোধী বিক্ষোভ অবস্থানের বিরুদ্ধে সভা করেন বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র।
ওই সভায় পুলিশকে তিনদিনের সময়সীমা দিয়ে কপিল মিশ্র বলেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিরোধী বিক্ষোভ অবস্থান তুলে দিয়ে রাস্তা খালি করতে হবে।
তা না হলে এর ব্যবস্থা তারাই করবেন। এরপরই উত্তরপূর্ব দিল্লিতে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে।মৃত্যু মিছিল প্রত্যক্ষ করে দেশ।
এই হিংসার তদন্তে জানা যায়, দিল্লির উত্তরপূর্বাঞ্চলে হিংসার পিছনে রয়েছে দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদীরা।
এরা মুসলিমদের বাড়িঘর ও মসজিদ পুড়িয়ে দেয়। মসজিদের মাথায় গেরুয়া পতাকা লাগিয়ে দেয়।
আইআইএসসি-র গবেষক ও পড়ুয়ারা তাঁদের বিবৃতিতে বলেন, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি এবং বিশেষ করে দিল্লির বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।
গত কয়েকদিনে দিল্লিতে হিংসায় এক পুলিশকর্মী ও সাধারণ নাগরিকদের জীবনহানির ঘটনা আমাদের ব্যথিত করেছে।
দিল্লি জুড়ে সাম্পদায়িক শক্তির লক্ষ্য হল মুসলিম সম্প্রদায় এবং এটা ভারতের গণতান্ত্রিক ও ধর্মনিরপেক্ষ ভাবধারার বিরোধী।
দিল্লির আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব ভারত সরকারের। জীবন ও সম্পত্তি রক্ষায় সরকারের ব্যর্থতার আমরা তীব্র নিন্দা করছি।
আমরা দাবি করছি, পরিস্থিতি আরও খারাপ যাতে না হয়, তার জন্য জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ গ্রহণ করুক সরকার এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে এনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করুক।
দেশের যেকোনও প্রান্ত এবং দিল্লির পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ওই বিবৃতিতে কিছু প্রস্তাবও দিয়েছেন গবেষক-পড়ুয়ারা।
তাঁরা বলেছেন, যেকোনও মানুষ হিংসায় প্ররোচিত করলে, দাঙ্গা করলে এবং জনগণ ও সম্পত্তির উপর আক্রমণ ও অগ্নিসংযোগ করলে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
দিল্লি এবং অন্যান্য অঞ্চলে হিংসার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের চিকিৎসা, প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং আইনি সহায়তার ব্যবস্থা করতে হবে।
যারা আপনজনকে হারিয়েছেন, জখম হয়েছেন বা যাদের সম্পত্তি ধ্বংস করা হয়েছে তাঁদের জন্য অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করার দাবিও করেন গবেষক-পড়ুয়ারা।
এছাড়াও ওই বিবৃতিতে তাঁরা বলেছেন, গত দুমাসের বেশি সময় ধরে সিএএ, এনপিআর, এন আরসি-র বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ চলছে।
শান্তিপূর্ণ পথে প্রতিবাদ আন্দোলন গণতন্ত্রে এক নাগরিক অধিকার।
তাঁরা সরকারের কাছে শান্তিপূর্ণ ও অহিংস প্রতিবাদ আন্দোলনকে সুরক্ষিত করার দাবি জানান এবং প্রতিবাদীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধানেরও দাবি জানান।
উল্লেখ্য, আইআইএসসি বেঙ্গালুরুর ৩০০ গবেষক ও পড়ুয়া ওই বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন।