শস্যগোলা বর্ধমানে জামাই আদর নাড্ডাকে

শুভজিৎ চক্রবর্তী

কৃষি আইনের বিরোধিতায় ৫০ দিনের বেশী সময় ধরে দিল্লি সীমান্তে আন্দোলন করছেন কৃষকরা। আট দফা বৈঠকের পরেও এখনও বরফ গলাতে পারেনি কেন্দ্র। এরই মধ্যে দেশের একাধিক জায়গায় কৃষি আইনের সমর্থনে একাধিক কর্মসুচী শুরু করেছেন গেরুয়া শিবিরের নেতারা।

শনিবার বাংলায় এসে সেই কর্মসুচীর অংশ হিসাবে ‘কিষাণ সুরক্ষা’ কর্মসুচী উদ্বোধন করলেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা। এমনকি মতুয়া, আদিবাসী এবং বাউল পরিবারের গেরুয়া মধ্যাহ্ন ভোজনের পর এবার কৃষকের পরিবারে মধ্যাহ্ন ভোজন করলেন সর্বভারতীয় বিজেপি সভাপতি। ছিলেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব।

গতবারের বাংলা সফরে এসে হমলার মুখে পড়তে হয়েছিল নাড্ডাকে। শনিবার সেই ছবি বদলে গেল। এ যেন আড়ম্বর। শাঁখ বাজিয়ে, উলু দিয়ে বরণ করে নিল পুর্ব বর্ধমানের কাটোয়ার কৃষক পরিবাররা।

ফুল, চন্দনের সঙ্গে থালায় সাজানো নলেন গুড়ের রসোগোল্লা নিয়ে একবারে জামাই বরন করে নেওয়া হল। এর পরেই কর্মসূচী স্থির করে ফেলল বিজেপি। ২৪ থেকে ৩১ জানুয়ারি রাজ্যের ৪০ হাজার কৃষি প্রধান গ্রামে চলবে এই কর্মসুচী।

আর সময় পার হতেই তর্জনি তুলে আক্রমণ শানালেন শাসক দলের বিরুদ্ধে। কৃষকদের বঞ্চনার কথা তুলে ধরলেন নাড্ডা। “টিএমসি কা যানা তেয় হেয় অউর বিজেপিকে আনা তেয় হেয়” কার্যত এই ভাষাতেই শাসক শিবিরের বিরুদ্ধে তোপ দাগলেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ বাংলা কেন?

রাজনৈতিক মহলের মতে গত লোকসভার পর পশ্চিমবঙ্গে জনমত বেড়েছে বিজেপির। আর সেটাকে হাতিয়ার করেই কৃষকদের সমর্থন পেয়ে আরও জনমত বাড়াতে চাইছে তাঁরা। যাতে ২১ এর নির্বাচনের আগে ভোটের অঙ্কটা পরিষ্কার হয়ে যায়।

http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/vandalism-in-shuvendu-adhikaris-office-tension-in-nandigram/

ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের কৃষি আইনের বিরোধিতায় সরব হয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি বিধানসভায় দুই দিনের বিশেষ অধিবেশন ডেকে প্রস্তাব পাশ করাতে চাইছে রাজ্যের শাসক দল। পাশে থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন বাম-কংগ্রেসকে। ঠিক সেই সময়েই বিজেপির ‘কিষাণ সুরক্ষা’ কর্মসুচী নিয়ে পাল্টা জনমত বাড়াতে চাইছে গেরুয়া শিবির।

একই প্রেক্ষিতে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায়। “একাধিক জায়গায় নির্বাচন থাকা সত্ত্বেও কোথাও যাচ্ছে না। আর বিজেপির হনুমানগুলো টুপটুপ করে বাংলার মাটিতে লাফিয়ে পড়ছে। এদের কাজ হল পশ্চিম বাংলায় এসে সরকারের বিরুদ্ধে কুৎসা করা। আর কোনও কাজ নেই”।

কিন্তু বাংলা কেন? রাজনৈতিক মহলে মতে, চলতি বছরে অসম, তামিলনাড়ু, কেরালা, পদুচেরি এবং পশ্চিমবঙ্গের নির্বাচন রয়েছে। কেরলে এই মুহূর্তে সেই ধরনের সংগঠন তৈরি করতে পারেনি বিজেপি।

অসম এবং তামিলনাড়ুতে এনডিএ শিবিরের সরকার রয়েছে। কিন্তু বাংলায় সংগঠন বাড়লেও ক্ষমতায় নেই পদ্ম শিবির। তাই তাঁদের লক্ষ্য নীলবাড়ি দখল। তাই প্রত্যেক মাসেই একাধিক কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব আসছেন নীচুতলার কর্মীদের চাঙ্গা করতে।

কৃষকদের সঙ্গে বৈঠকের পরেও আইন প্রত্যাহারের পথে যেতে রাজি নয় কেন্দ্র সরকার। অন্যদিকে, রাজ্যে এসে কৃষকদের বঞ্চনা এবং কৃষকদের উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সমর্থন আদায় করতে মরিয়া বিজেপি।এমনকি কিষাণ সম্মান নিধি থেকে বাংলার কৃষকদের বঞ্চিত করার কথা উঠে আসে বিজেপির নেতাদের বক্তব্যে। আর তোপ দাগছেন শাসক দলের বিরুদ্ধে।

রাজনৈতিক মহলের মতে, তৃণমূলের গাফিলতির কথা উল্লেখ করেই ক্ষমতায় আসতে চাইছে বিজেপি। একই কথা শোনা গিয়েছে সিপি(আই)এমের পলিটব্যুরো মহম্মদ সেলিমের কথাতেও।

http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/bjps-mohammad-selim-is-using-the-tmc-as-a-platform-in-the-state-mohammad-selim/

সব মিলিয়ে কৃষক আন্দোলনের সমর্থনে মমতা যখন এগিয়ে আসছেন, তখন পশ্চিমবঙ্গের কৃষকদের বঞ্চনার কথা বলে নির্বাচনী ময়দানের মাটি উর্বর করছে বিজেপি।

কিন্তু সরকার নিয়ে সমালোচনা করলেও ভবিষ্যতের জন্য কোনও রোডম্যাপ রয়েছে বিজেপির কাছে? প্রশ্ন খুঁজতে মরিয়া বাংলার জনগণ।

সম্পর্কিত পোস্ট