অভিষেকের রাজনৈতিক দক্ষতায় প্রশ্ন, ঘুরপথে দলের অসম্মান; ‘রাজীব’ জ্বরে কাবু দুঁদে কল্যাণ

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্ক: এই মুহূর্তে রাজ্যজুড়ে শীতের পারদ নিম্নমুখী। তবে করোনা কে বাদ রেখে রাজনীতির ময়দানে তাপমাত্রার হেরফের যে বেশ বেগ দিচ্ছে এরাজ্যের শাসক দলকে তা বোধ হয় কারও অজানা নয়। আর রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে ফিরে আসাও যে যথেষ্টই বেগ দিচ্ছে শ্রীরামপুরের সাংসদকে তাও যেন ক্রমেই দিনের আলোর মত স্পষ্ট হয়ে উঠছে। সেই ক্ষোভ থেকেই কী প্রকাশ্যে অভিষেকের রাজনৈতিক দক্ষতায় প্রশ্ন তুললেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়?

রাজীব, কাঞ্চনের পর কল্যাণের কাঠগড়ায় দলের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর রাজনৈতিক দূরদর্শিতায় চ্যালেঞ্জ করে পরিবারতন্ত্রের খোঁচা দিয়ে সংবাদমাধ্যমের হিট লিস্টে উঠে এসেছেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিদিন ক্রমশ জটিল হচ্ছে রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি। সেই পরিস্থিতির কথা বিচার করেই ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ ও দলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন আগামী দু’মাস রাজনৈতিক ও ধর্মীয় সমাবেশ বন্ধ রেখে করোনা মোকাবিলা করার কথা। যদিও শেষে তিনি এও জানিয়েছিলেন এই বক্তব্য একান্তই তাঁর ব্যক্তিগত। এখান থেকেই শুরু বিবাদ।

তোপ, পাল্টা তোপে ক্রমেই বেআব্রু হয়ে পড়ে শাসক দলের অন্তর্দ্বন্দ্ব। অভিষেকের বক্তব্যকে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ বলে দাবি করেন কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, ‘‘দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের পদটি সর্বক্ষণের। তাই এই পদে থেকে কারও ব্যক্তিগত মত থাকতে পারে না। অনেক বিষয়েই আমারও ব্যক্তিগত মত আছে। দলীয় শৃঙ্খলার কারণেই তা প্রকাশ্যে বলি না। এটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারেরই বিরোধিতা করার শামিল। এ ভাবে আসলে রাজ্য সরকারকেই চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে।’’

যদিও এরপরই অভিষেকের পক্ষ নিয়ে ময়দানে নামেন কুণাল ঘোষ। রীতিমত একহাত নেন শ্রীরামপুরের সাংসদকে। সংবাদ মাধ্যমের সামনেই অকপটেই বলেন, “দলের সর্বাধিনায়িকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তারপরই রয়েছেন অভিষেক। তাই অভিষেকের মতো নেতা কিছু বললে দলের সৈনিক হিসেবে আমাদের তা চুপ করে শোনা উচিত। কোনও মন্তব্যের আগে সব দিক ভেবে দেখা উচিত।’’

এরপর অনেকেই ভেবেছিলেন হয়ত পশ্চিমী ঝঞ্ঝার মত হাজির হয়ে উত্তরের হাওয়াকে বাধাপ্রাপ্ত করে হয়তো শীতের ছুটি করে দেবে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা। কিন্তু তা না হয়ে একবারে গরমাগরম পরিস্থিতিতে কুণালকেও রেয়াত করলেন না কল্যাণ। একরাশ হাসি নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে জানিয়ে দিলেন, “জেল থেকে মমতাকে আক্রমণ করিনি। প্রিজন ভ্যান থেকেও কিছু করিনি। কবে দলে আছেন, কবে নেই, জানি না। আমার ব্যক্তিগত চরিত্র হনন করলে, আমাকেও দেখতে হবে নিয়ম ভাঙা হচ্ছে কি না।”

একইসঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রসঙ্গে কল্যাণের পর্যবেক্ষণ,” মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া কাউকে নেতা বলে মানি না।অভিষেক ব্যানার্জি যদি ত্রিপুরা আর গোয়া জিতিয়ে দেখাতে পারেন, তাহলে ওঁকে নেতা বলে মেনে নেব!’’

এখানেই রয়েছে রাজনৈতিক টুইস্ট। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষরা বলছেন, কুণাল ঘোষের পাল্টা জবাব দিয়ে দলের অন্দরে যে হিমেল স্রোত কল্যাণ বইয়ে দিলেন তাতে চওড়া ফাটল স্পষ্ট। প্রশ্ন, যে কল্যাণ বাবু মাস ছয়েক আগে পর্যন্ত অভিষেকের পক্ষ নিয়ে কথা বলেছেন আজ কেনো তাঁর মতিভ্রম?

এক্ষেত্রে কারণ বুঝতে গেলেই যেদিকে নজর যাবে তা হল, অভিষেকের হাত ধরে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমুলে প্রত্যাবর্তন। শুধু তাই নয়, ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনকে পাখির চোখ করে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন অভিষেক। যা কিছুতেই মন থেকে মানতে পারেননি শ্রীরামপুরের সাংসদ। অথচ ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে এই কেন্দ্র থেকে তাঁর জয়ী হওয়ার পেছনে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা ছিল অনস্বীকার্য। তাহলে কীসের ভিত্তিতে বারবার প্রকাশ্যে সরব হচ্ছেন কল্যাণ?

দ্বিতীয়ত, রাজ্যের কোনায় কোনায় ও রাজ্যের বাইরে তৃণমূল কংগ্রেসের সংগঠনকে প্রতিষ্ঠা করার কথা প্রথম বলেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতই কাজ শুরু করেছেন তিনি। সেখানে সংগঠন তৈরীর কাজে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়, মহুয়া মৈত্রের মত নেতারা চান্স পেলেও অনেকটাই পিছিয়ে আছেন দুঁদে আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।

পর্যবেক্ষকদের মত, সামনেই পাঁচ রাজ্যের নির্বাচন। তাঁর আগে গোয়ায় ঘুঁটি সাজানোর কাজ করছে তৃণমূল। মহুয়া মৈত্রের পাশাপাশি সম্প্রতি গোয়া ঘুরে এসেছেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ও। সেখানে দলের সেকেন্ড ইন কমান্ডের বিরুদ্ধাচারণ করে ঘুরপথে দলকে অসম্মান করলেন কল্যাণ বন্দোপাধ্যায়।

টানটান রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে দাঁড়িয়ে কুণাল- অভিষেক- কল্যাণ নাটক জমে উঠেছে। এই বিস্ফোরণ আদৌ দুঁদে আইনজীবীর জন্য কোনো ‘ কল্যাণ’ কর কোনো সংবাদ বয়ে আনে কিনা তারই কাউন্টডাউন করছেন শাসক থেকে বিরোধী সকলেই।

সম্পর্কিত পোস্ট