সেই কান্দাহার ফের তালিবান দখলে, যেখানে হয়েছিল IC814 বিমান অপহরণের নাটকীয় শেষ পর্ব
প্রসেনজিৎ চৌধুরী
ঝড়ের গতিতে কাবুলের দিকে এগিয়ে আসছে তালিবান। দ্রুত গতিতে পিছিয়ে যাচ্ছে আফগান সেনা। এবার আফগানিস্তানের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ শহর কান্দাহারের দখল নিয়েছে জঙ্গিরা। এমনই দাবি করেছে তালিবান। তাৎপর্যপূর্ণ, এই দাবি সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেনি আফগান সরকার।
বিবিসি জানাচ্ছে, গত নব্বই দশকে যখন আফগানিস্তানের ক্ষমতায় এসেছিল তালিবান জঙ্গি সরকার তখন কান্দাহার ছিল তাদের অন্যতম ঘাঁটি। বরাবরই এই শহরের নাম আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের পর উঠে আসে। গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে এটি কৌশলগত দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ।
তবে কান্দাহার বলতেই উঠে আসবে সেই ভয়াবহ কয়েকটা দিনের কথা। তালিবানি, পাকিস্তানি জঙ্গিদের সঙ্গে কয়েকদিনের টানাপোড়েন ও শতাধিক যাত্রীর জীবন নিয়ে দড়ি টানাটানির ঘটনা।
কাঠমান্ডু থেকে কান্দাহার: বাজপেয়ীর সময়ে ভারতীয় IC 814 বিমান অপহরণ-
আফগানিস্তানে তালিবান জঙ্গি সরকারের আমলে সে দেশের কান্দাহার ঘিরেই ঘটেছিল সেই ভয়াবহ বিমান অপহরণের নাটকীয় পর্ব।
১৯৯৯ সালের ২৪ ডিসেম্বরের ঘটনা। নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডু থেকে উড়েছিল ভারতীয় যাত্রীবাহী IC 814 বিমান। উড়ানের কিছু পরে সেই বিমান অপহরণ করা হয়েছে বলে দাবি করে যাত্রীদের মধ্যে থাকা কয়েকজন সশস্ত্র জঙ্গি।
অপহরণকারীরা জানায় ভারতে বন্দি পাকিস্তানি জঙ্গি নেতা জইশ ই মহম্মদ গোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা মাসুদ আজাহারের মুক্তি। তাকে মুক্তি না দিলে ১৭৬ জন যাত্রী ও ১৫ জন ক্রু সমেত বিমানটি বিস্ফোরণে উড়িয়ে দেওয়া হবে। কাঠমান্ডু থেকে বিমানটি লখনউের কাছাকাছি আসার পর অপহরণকারীরা বিমান চালককে সরাসরি পাকিস্তানে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। বিমানটি লাহোরে নামাতে বলে।
বিমান চালক দেবী শরণ জানান জ্বালানী নেই তাই জরুরি অবতরণ করেন অমৃতসরে। সেখান থেকে ফের বিমানটি লাহোরে গিয়ে নামে। লাহোর থেকে বিমানটি নিয়ে যাওয়া হয় সংযুক্ত আরব আমিরশাহীর দুবাইতে। সেখান থেকে সর্বশেষ আফগানিস্তানের কান্দাহারে গিয়ে উড়ান শেষ করে IC 814 বিমান। মাঝে দুবাই থেকে ২৭ জনকে ছেড়ে দেয় জঙ্গিরা।
তখন অটল বিহারি বাজপেয়ী প্রধানমন্ত্রী। বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে গোয়েন্দা ব্যর্থতার রোষ ছড়ায় দেশজুড়ে। আফগানিস্তানের কান্দাহারে সেই অপহৃত ভারতীয় বিমান ঘিরে টানা কয়েকদিন চলছিল তালিবান জঙ্গি ও ভারত সরকারের টানাপোড়েন।
কান্দাহার বিমান বন্দরে অপহৃত ভারতীয় বিমানটি ঘিরে তালিবান জঙ্গিদের পাহারা ছিল। ভিতরে ছিল পাকিস্তানের মদতে থাকা কাশ্মীরের স্বাধীনতার দাবি করা হরকত উল মুজাহিদিন জঙ্গিরা। ৩১ ডিসেম্বর অবশেষে তালিবান সরকার ভারতীয় প্রতিনিধিদের আফগানিস্তানে ঢুকতে অনুমতি দেয়।
পাকিস্তানি জঙ্গিদের নেতা মাসুদ আজাহারকে নিয়ে কান্দাহার যান ততকালীন বিদেশমন্ত্রী যশবন্ত সিং ও গেয়োন্দা কর্মকর্তা অজিত দোভাল। মাসুদ আজাহারের মুক্তির বিনিময়ে ভারতীয় যাত্রীদের ছেড়ে দেয় বিমান অপহরণকারীরা। আফগানিস্তানের তালিবান সরকার এরপর মাসুদ আজাহারকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেয়।