রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে কাছাকাছি বাম ও তৃণমূল
নয়ন রায়
রাজ্যপাল বদল বিতর্ক এ বাংলায় নতুন নয়। ধরমবীরা যখন এই রাজ্যের রাজ্যপাল ছিলেন তখন দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। তাঁর বিরুদ্ধে সেসময় যুক্তফ্রন্ট সরব হয়ে তাঁকে সরানোর দাবি তুলেছিলেন।ইন্দিরা গান্ধী ধরমবীরাকে সরিয়ে দিয়েছিলেন।
সময় পাল্টেছে। পরিস্থিতিও পাল্টেছে। পরিবর্তন হয়েছে রাজনৈতিক ধারা-উপধারার। তাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন সারকারিয়া কমিশনে বলা আছে রাজ্যপালের পদের নিয়োগের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের উচিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করা।
আবার উল্টোদিকে বামেদের দীর্ঘদিনের দাবি সাংবিধানিক পদের কোনো প্রয়োজন নেই। এই বিতর্ক নতুন নয়। বিতর্ক বহু পুরনো। হঠাৎ করে জগদীপ ধনকরকে নিয়ে বিতর্ক কেন হচ্ছে ? কারণ তিনি তাঁর নিজস্ব স্টাইলে ব্যাট করছেন,অভিযোগ শাসক শিবিরের।
কথায় কথায় কথায় কথায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগা। কখনো স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রী কখনো বা রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করছেন। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন ” তিন-তিনবার চিঠি দিয়েছি এই রাজ্যপাল পরিবর্তনের জন্য। কেন্দ্র কোন কথা শোনেনি।”
বিতর্ক এখান থেকে শুরু হচ্ছে তাহলে কি কেরালার রাজ্যপাল আরিফ মোহাম্মদ খানকে রাজ্যের রাজ্যপাল করা হতে পারে? তিনি তো আরো বেশি হার্ডলাইনার মানুষ।
গেরুয়া শিবিরের অভিযোগ সন্ত্রাসের মোকাবিলা করতে করতে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে বিজেপির বিধায়ক থেকে কর্মী সমর্থকরা। শাসক দল বলছে এ রাজ্যে কোন সন্ত্রাসের বাতাবরণ তৈরি হয়নি। শীতলকুচি নিয়ে রাজ্যপাল সরব হয়েছিলেন। তিনি শীতলকুচি গিয়েছিলেন। আবার দিনহাটাও গেছেন।
তিনি কখনও নিশীথ প্রামানিককে নিয়ে গেছেন। কখনো আবার সঙ্গী হয়েছেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক তথা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সাংবিধানিক প্রধান কাকে নিয়ে যাবেন, আর কাকে নিয়ে যাবেন না এটা তার সাংবিধানিক বিষয়।
আবার উল্টোদিকে এই প্রশ্ন উঠে আসবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তিনি যখন প্রশাসনিক বৈঠক করতে যান বা বেসরকারি কোন মিটিং করতে যান সেখানে সাংসদ ও বিধায়ক সহ লোকজন নিয়ে যান তো! তাহলে সমস্যাটা কোথায়?
আসলে শাসকের সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু হল জগদীপ ধনকর। তাঁকে বাদ দিয়ে রাজ্যে তার পরিবর্তে কি আরিফ মাহমুদ খান আসতে পারেন ? আসলে সেটা নয় শাসক দলের কথা অনুযায়ী, শাসক দল যে ইশারাতে চলতে চাইবেন সেই ফাইলে সই করে দেওয়াই রীতি রাজ্যপালের। বিধানসভায় বাজেট অধিবেশন হোক বা অন্যান্য কোনো অধিবেশন। সরকার যেটা লিখে দেয় সেটাই হুবহু পড়ে দেন রাজ্যপাল।
জাগদীপ ধনকর সে পথের পথিক নন। তিনি উল্টো পথে হাঁটছেন। অবশ্য গোপালকৃষ্ণ গান্ধীর কথা প্রত্যেকেরই মনে আছে। যখন নন্দীগ্রামের মতো পরিস্থিতি উত্তপ্ত হচ্ছে, তিনি বলেছিলেন হাড় হিম করা সন্ত্রাস। সেদিন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৎকালীন রাজ্যপালের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন।
আসলে রাজনীতি যে বলে খেলা হয় সেই বলে শেষ আঘাত এবং প্রত্যাঘাত থাকে। তাই মুখ্যমন্ত্রীকে বলতে হচ্ছে “বাচ্চা হলে বকে দিতাম। রাজ্যপাল তো বাচ্চা নয়” ।
সাংবিধানিক প্রধান দিল্লিতে যেতে পারেন। অপরদিকে বিরোধী দলের বিধায়কের কাছে রাজ্যের সন্ত্রাস কবলিত এলাকার কথা শুনতে পারেন। সেটা তাঁর অধিকার। কিন্তু রাজ্যপালের এই ভূমিকাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে সারকারিয়া কমিশনের কথা।
বামফ্রন্টের লাইন এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তিনবার চিঠি রাজ্যপাল পরিবর্তনের বিষয় আর সন্ত্রাস- তিনটি কখনো এক ইস্যু হবে কিনা তাও ভেবে দেখতে হবে।
প্রশ্ন রাজ্যপালকে হটাতে হবে এটাই বাম ও তৃণমূলের মূল ইস্যু। সেটার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এ প্রশ্ন উঠছে রাজভবনে যদি ৫০ জন বিধায়কদের নিয়ে রাজ্যপাল বৈঠক করতে পারেন, রাজ্যের সামগ্রিক সন্ত্রাস পরিস্থিতি নিয়ে তাহলে টেট এবং শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে যে সমস্ত শিক্ষকরা রাস্তায় রাস্তায় পথে পথে ঘুরছে তাদেরকে নিয়ে বৈঠক করতে অসুবিধা কোথায় ?
প্রশ্ন করছেন সমাজের বিদ্বজন। এখানেই নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সবাই। আরিফ খান নাকি জগদীপ ধনকর ? এই প্রশ্নই আপাতত ঘুরপাক খাচ্ছে দিল্লি এবং পশ্চিমবঙ্গের আকাশে।