মুখ্যমন্ত্রীকে উপেক্ষা করে রাজ্যপালের হাতে ইস্তফা,রাজীবকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ মমতার
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ রাজভবন থেকে ইস্তফা দিয়ে বেরিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। ভাবটা এমন চরম অবিচার হয়েছে তাঁর সঙ্গে। কিন্তু মন্ত্রিসভা ছাড়ার আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ন্যূনতম সৌজন্য দেখালেন না তিনি।
কারণ মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগের সময় মুখ্যমন্ত্রীকে আগে জানাতে হয়। এটাই পরিষদীয় রাজনীতির রিতী। কিন্তু রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কাছে পদত্যাগের চিঠি পৌঁছানোর পরই রাজভবনে গিয়ে জানিয়ে দেন তিনি পদত্যাগ করছেন। আর রাজ্যপালও বনমন্ত্রীর সেই পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন।
এরপরই নবান্নের থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফায় পদ্ধতিগত ত্রুটি রয়েছে। এই অভিযোগেই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের পদত্যাগপত্র গ্রহণ না করে রাজীবকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করা হচ্ছে।
রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেছিলেন, কালীঘাটের বাড়ির অফিসে গিয়ে খোদ মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই পদত্যাগপত্র তুলে দেন তিনি। কী কারণে ইস্তফাপত্র গ্রহণ না করে রাজীবকে অপসারণের পথে হাঁটলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়?
সূত্রের খবর, মুখ্যমন্ত্রীর পাশাপশি রাজ্যপালের বাসভবনে গিয়েও ইস্তফাপত্র দিয়েছেন রাজীব। যা সাংবিধানিক রীতির বিরোধী বলে দাবি নবান্নের। রাজ্যের মন্ত্রীদের নিয়োগকর্তা মুখ্যমন্ত্রী। নিয়ম অনুযায়ী, কোন মন্ত্রী পদত্যাগ করতে চাইলে মুখ্যমন্ত্রীকেই পাঠাতে হবে ইস্তফাপত্র। তিনি তা গ্রহণ করে রাজ্যপালকে পাঠান। কিন্তু রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় তা করেননি।
তৃণমূলে যোগ দিলেন অভিনেতা সৌরভ দাস
মুখ্যমন্ত্রীকে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েই তিনি পৌঁছে গিয়েছেন রাজভবনে। সেখানে তাঁর সঙ্গে রাজ্যপালের এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বৈঠকও চলে। ঠিক এই বিষয়টিকে পদ্ধতিগত ত্রুটি বলে তুলে ধরা হচ্ছে নবান্নের তরফে। তাই পদ্ধতিগত কারণেই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুক্রবার সকালেই বনমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন রাজীব। এরপর ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘প্রিয় বন্ধুরা, আশা করি আপনারা ভালো আছেন। আপনাদের সকলকে জানাতে চাই, আমি পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বনমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দিচ্ছি। বেশ কিছু বছর ধরে আমি দায়িত্ব এবং নিষ্ঠার সঙ্গে আমার কর্তব্য পালন করার চেষ্টা করেছি।
তিনি বলেন, আপনাদের প্রত্যেককে আমি আমার বৃহৎ পরিবারের অংশ বলে ভাবি। আপনাদের সমর্থন আমাকে সামনে এগোতে ও মানুষের জন্য আরও ভালো কাজ করতে অনুপ্রেরণা জোগায়। আমি আমার পদত্যাগের কথা সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছি। আশা করছি, আগামী বছরগুলিতে আপনাদের যথাসম্ভব ভালো পরিষেবা দিতে পারব। সেই কারণেই আমি রাজনীতিতে থাকব।’
যদিও রাজভবনের বৈঠক সেরে বেরিয়েই রীতিমতো কাঁদতে-কাঁদতে খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই নিশানা করেন রাজীব। বলেন, ‘খুব খারাপ লাগছে। আমার হৃদয় ভেঙে গিয়েছে। আমি বেদনাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। কোনও দিন ভাবিনি এমন কঠিন সিদ্ধান্ত আমাকে নিতে হবে।’
কর্ণাটক বিস্ফোরণঃ মৃতদের পরিবার পিছু ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর
কিন্তু এরপরই রাজীবের ক্ষোভ, ‘আড়াই বছর আগে আমার দফতর বদলে দেওয়া হয়। অথচ বদলের সময় মুখ্যমন্ত্রী সামান্য সৌজন্যও দেখাননি। টিভিতে ব্রেকিং নিউজ দেখে আমাকে জানতে হয়েছে এই খবর।’
এদিন রাজভবনের বৈঠকের পরই যেভাবে রাজীব সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ শানিয়েছেন, তাতে সংঘাত আরও বাড়ার আশঙ্কা ছিলই। ইস্তফাপত্র গ্রহণের বদলে তাঁকে অপসারণ সেই সংঘাতেরই বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।