কামারহাটিতে মিত্র বনাম মিত্রের মাঝে থাকছেন অনিন্দ্যও
।। শুভজিৎ চক্রবর্তী ।।
বিটি রোডের ধার দিয়ে গেলে মনে হচ্ছে যেন রঙিন হাওয়া বইছে। রাজনৈতিক রঙিন হাওয়া। তবে ফোন খুললেই যাকে পাই, সেই মদন মিত্র তোমায় চাই? ‘লাভলি’। কামারহাটির মানুষ মদন মিত্রকে গতবারে তো চাননি। গতবার জেল থেকেই লড়েছিলেন। বিরোধীদের প্রচারের অস্ত্র ছিল “কাকে ভোট দেবেন? পাঁচ বছর তো ওনাকে দেখা যাবে না”। কমিটমেন্ট রেখে কামারহাটির ময়দানে ফিরেছেন মদন মিত্র।
কখনও পায়ে হেঁটে, কখনও হুড খোলা জিপে আবার কখনও নিজেই বাইক চালিয়ে র্যােলি করছেন মদন না। মদন মিত্রের প্রচারে হাজির হচ্ছেন টেলি থেকে টলি এমনকি বলিউডের তারকারাও। প্রচারে প্রার্থীর সাজবহর দেখে মনে হচ্ছে তিনি এখনই জিতে বসে আছেন।
সম্প্রতি দোলের দিনে বিরোধী পক্ষের প্রার্থীদের সঙ্গে গঙ্গাবক্ষে দোল খেলে আলোচনায় এসেছিলেন মদন মিত্র। অনেকেই মনে করেছিলেন রাজনীতির রঙবদল করবেন। কিন্তু মদন মিত্র জানিয়েছেন, শুরু থেকে দলের সঙ্গে ছিলেন। এখন দলের খুশির সময় এখনও দলের সঙ্গেই আছেন আর থাকবেনও। আর গঙ্গাবক্ষে দোলের বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে চান না তিনি।
কিন্তু ওই বিষয়কে হাতিয়ার করে প্রচারে জোর দিয়েছেন ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সায়নদীপ মিত্র। বিজেপিতে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে রয়েছেন মদন মিত্র। এটাই এখন প্রচারের প্রধান অস্ত্র। সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত সিপি(আই)এম প্রার্থীকেই কামারহাটির আসল মিত্র বলছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গত দশ বছরে শাসক দলের রিপোর্ট কার্ডের খতিয়ানের বিরুদ্ধেই প্রচার করছেন তিনি। কর্মসংস্থান, বেকারত্ব এবং শিল্পের ইস্যুতে বাড়ি বাড়ি প্রচার করছেন সায়নদীপ। প্রচারে কোনও এলাকাই মিস করছেন না তিনি।
গতবার এই কেন্দ্রে জয়লাভ করেছিলেন বাম প্রার্থী মানস মুখার্জী। এবার তিনি আর দাঁড়াতে চাননি। তাই সায়নদীপের মতো প্রার্থীকেই বেছে নিয়েছে দল। কিন্তু লোকসভা ভোটে অঙ্ক বদলে গিয়েছে। এখানেও বামের ভোট চলে গিয়েছে রামে। এবার এই কেন্দ্রে অনিন্দ্য বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রার্থী করেছে বিজেপি। বিজেপি এবং রাজ্যজুড়ে তাঁকে রাজু ব্যানার্জী বলেই লোকে চেনে।
কিছুদিন আগেই তাঁর একটি প্রচারের ভিডিও ভাইরাল হয়েছিল, যেখানে প্রচারে বেরিয়ে গ্যাসের দাম নিয়ে ভোটারদের কাছে মুখঝামটা খেয়ে ফিরতে হয়েছিল প্রার্থীকে। কিন্তু শাসক দলের বিরুদ্ধে প্রচারে শান দিয়েছে রাজুবাবু। “এবার আসল পরিবর্তন”। একেবারে চাঁচাছোলা বক্তব্য প্রার্থীর।
কিন্তু ভোটের লড়াই মিত্র বনাম মিত্র হবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কারণ, এলাকার সংখ্যালঘু ভোট বিশেষ ফ্যাক্টর বলে মনে করছেন অনেকেই। তবে বিজেপির পালে হাওয়া লাগাতে পারে একমাত্র এলাকার উদ্বাস্তু এবং তৃণমূল থেকে চলে আসা সমর্থকরাই। ত্রিশঙ্কু লড়াইয়ে অঙ্ক মেলাতে শুরু করেছে রাজনৈতিক মহল। রাজ্যের পঞ্চম দফার নির্বাচনে বিশেষ নজর কামারহাটিও।