নজরে নদীয়াঃ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জাঁতাকলে চৈতন্যের জেলায় অচৈতন্য শাসক
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ চৈতন্যের জেলায় অচৈতন্য শাসক দল। সাংসদ মহুয়া মৈত্রের মধুময় বচন রাজ্য রাজনীতিতে হিমেল হাওয়ার মাঝেও উষ্ণতা এনে দিয়েছে। বিতর্কিত মন্তব্যে একসময় প্রাক্তন ও প্রয়াত সাংসদ তাপস পাল রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিলেন।
বর্তমানে মহুয়া মৈত্র সেই একই পথের পথিক বলেই মনে করছেন প্রবীন-নবীন সকলেই। সাংবাদিকদের প্রতি সাংসদের মন্তব্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সুশীল সমাজ। তবে ওনার জ্ঞাতার্থে বলে রাখা প্রয়োজন, দু’পয়সার সাংবাদিকদের সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্ক কিন্তু ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে।
চৈতন্য প্রভাবিত জেলা নদীয়া। শাসকদল নানা বিভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। মহুয়া মৈত্র, উজ্জ্বল বিশ্বাস, গৌরী শঙ্কর দত্ত, শংকর সিং, অজয় দে, অরিন্দম ভট্টাচার্য- এতগুলি দলের উত্থান প্রভু চৈতন্যের ভূমিতে শাসকদলকে অচৈতন্য করে দেওয়ার জোগাড়।
গ্রুপের জাঁতাকলে পিষছেন নিচুতলার কর্মীরা। সেই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে ভারতীয় জনতা পার্টি। পলাশী, বেথুয়াডহরি, নবদ্বীপ, চাকদা, চাপড়া কৃষ্ণনগর, শান্তিপুর, করিমগঞ্জ, রানাঘাট, কল্যাণী- সর্বত্রই ক্রমশ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।
যতদিন জেলার দায়িত্বে ছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ততদিন সংগঠনকে শক্ত করে ধরে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু যে মুহুর্তে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয় সেই মুহুর্ত থেকে কিছুতেই রাশ টানা যাচ্ছে না দলবাজিতে।
নিচুতলার কর্মী থেক শুরু করে থেকে ব্লক, অঞ্চল, গোটা শহর জুড়ে শাসক দলের নেতাদের চালচলন, রাজনৈতিক বৈভব, সম্পত্তি, সিন্ডিকেটের দাপটে নাজেহাল আমজনতা। রীতিমত পরিস্থিতির শিকার হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/no-one-wants-to-be-chief-minister-from-mamata-banerjee-family-said-kalyan-banerjee/
নদীয়ার ফুলিয়া, শান্তিপুরে তাঁত জগৎ বিখ্যাত। কয়েক লক্ষ পরিবারের বাস সেখানে। যাদের জীবন জীবিকার মূল উৎস হল তাঁত। কিছু অংশে বাংলাদেশ থেকে আগত মানুষ। সেই সঙ্গে রয়েছে নদীয়ার স্থানীয় মানুষজন। নদীয়া জেলার জনগণনার হিসাব টা এককথায় এমনই।
যাদের জীবিকা তাঁত শিল্পের উপর নির্ভরশীল তাদের বক্তব্য সরকার তাঁত শিল্পীদের ও তাঁত শিল্পের মান উন্নয়নে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। সেই ছবি আমরা সরাসরি তুলে ধরেছিলাম। বৃদ্ধ বাবার চোখের জলে চিন্তা কীভাবে মেয়েকে পড়াশুনো শেখাবেন। কীভাবেই বা সংসার চালাবেন! সমবায় ব্যাঙ্ক থেকে যে ঋণের কথা মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন বলা ভাল প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন সেসব কোনোটাই নদীয়ার মাটিতে বাস্তবায়িত হয়নি।
আর যারা হস্তচালিত তাঁতের বদলে পাওয়ার লুমে কাজ করেন, সেই মেশিন কেনার দেনাতেই তাদের গলা অবধি ডুবে। দিনের পর দিন সাধারণ মানুষগুলোর এই অসহায়তা কিন্তু প্রভাব ফেলবে ভোটবাক্সে।
কারণ ভুলে গেলে চলবে না, মানুষের ভালমন্দের সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। এসবের কারণে হয়ত ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে শাসকদলের উপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলেন বৃহৎ অংশের মানুষ। জোড়া ফুলের বদলে সেখানে পদ্মের আধিক্য ভাবিয়েছে রাজনৈতিক মহলকেও।
একুশের নির্বাচনের আগে বিজেপির হাওয়া গরম নদীয়া জুড়ে। তারপর বাম কংগ্রেস জোট আরও ধাক্কা দেবে শাসক শিবিরকে। তাঁতের পাশাপাশি পাটের দামেও সহায়ক মূল্য পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করছেন পাট চাষিরা।
http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/bjp-will-continue-the-process-of-injury-even-after-the-election-yashwant-sinha/
নদীয়া জেলার অর্থনীতি তাঁত ও পাটের ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আর সেই না পাওয়া থেকেই পুঞ্জীভূত হচ্ছে ক্ষোভ।
তলিয়ে যাওয়ার পথে কৃষ্ণনগরের মৃৎশিল্পও। চরম আর্থিক যন্ত্রণা ভোগের হাত থেকে বাঁচতে অনেকেই পারিবারিক ব্যবসা ছেড়ে পাড়ি দিচ্ছেন অন্য পেশায়। মুখ্যমন্ত্রী নদীয়া জেলায় বহুবার প্রশাসনিক বৈঠক করলেও তাতে লাভ কিছু হচ্ছে বলে মনে হয় না।
তিনি সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে আমলাদের নির্দেশ দিলেও সেটা কতটা বাস্তব সম্মত হচ্ছে সেটা বোঝা মুশকিল। কারণ আমলাতন্ত্রের হয়রানিতে সাধারণ মানুষ বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে।
এসবের মাঝেই গোদের ওপর বিষফোড়া শাসকদলের অন্তর্কলহ। এর প্রভাব একুশের ভোটবাক্সে পড়তে বাধ্য। নদীয়া জেলায় শাসকদল যদি ভালো ফলাফল করতে না পারে তার জন্য দায়ী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নয়, বিধায়ক থেকে অঞ্চল এবং ব্লক নেতৃত্বই দায়ী থাকবেন।