নারদা নাটকে বাদ কেন শুভেন্দু- মুকুল ? জ্যৈষ্ঠের ভ্যাপসা গরমে শীতল স্রোত রাজ্য বিজেপির অন্দরে
সহেলী চক্রবর্তী
রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়। একদিকে করোনা পরিস্থিতি। অন্যদিকে নারদ কান্ডে গ্রেফতার 4 হেভিওয়েট নেতা। তার মধ্যে দুজন রাজ্যের বর্তমান মন্ত্রী। একজন বর্তমাাান বিধায়ক। একজন প্রাক্তন মন্ত্রী। তিনি অবশ্য কোন দলে রয়েছেন তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত রাজনৈতিক মহল।
এই মুহূর্তে এই চারজনের গ্রেপ্তারিকে কেন্দ্র করে এক অলিখিত যুদ্ধ কেন্দ্র বনাম রাজ্যের চলছেই। যার প্রেক্ষাপটে রয়েছেন রাজ্যের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর।
রাজনৈতিক মহলের প্রশ্ন,কেন লকডাউন পরিস্থিতিতে গ্রেপ্তার করতে হলো এই চার অভিযুক্তকে? শুধু তাই নয় এই 4 জন অভিযুক্ত বাদেও আরো দুজনের নাম বারবার উঠে আসছে। একজন মুকুল রায় অন্যজন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
এ প্রশ্ন তুলেছেন স্বয়ং নারদ কর্তা ম্যাথু স্যামুয়েল।তারা কেন বাদ ? এ প্রশ্নটি শুধুমাত্র তৃণমূল রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের আমজনতার তা কিন্তু নয়। রাজ্য বিজেপির অন্তরের বহু নেতাই এ প্রশ্নের সূচনা করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক দাপুটে বিজেপি নেতার কথায়, স্টিং অপারেশনের যে ফুটেজে দেখা গিয়েছিল, তাতে বর্তমান এমপি সহ এই চারজন বাদে ছবি ছিল শুভেন্দু অধিকারী মুকুল রায় এবং শঙ্কুদেব পণ্ডার। এই চারজনকে যদি আইনিভাবে গ্রেফতার করা হয়,তা হলে হিসাব মত শুভেন্দু, মুকুল এবং শঙ্কুদেবকেও গ্রেফতার করা উচিত। যতই বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ, সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার এবং বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য দাবি করুন না কেন এই গ্রেপ্তারি তে বিজেপির কোনো ভূমিকা নেই- তা আসলে মানতে চাইছে না কেউই।
2021 এর বিধানসভা নির্বাচনে পর্যুদস্ত হয়েছে বিজেপি। সেই পরাজয় কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না দলের একাংশ হেভিওয়েট নেতা। বিষয়টিকে দলীয় পরাজয় হিসেবে না দেখে অনেকেই আত্মপরাজয় হিসেবেও নিয়েছেন। যা কেন্দ্র বনাম রাজ্যের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার আগুনে ঘি ফেলেছে। অন্তত এমনটাই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।
কিন্তু এভাবে আদৌ ভারতীয় জনতা পার্টির বাংলা বিজয়ের স্বপ্ন বাস্তবে সম্ভব হবে? রাজ্য বিজেপির অনেক নেতাই বলছেন করোনা পরিস্থিতিতে সিবিআই-এর এই গ্রেপ্তারি ব্যাকফুটে নিয়ে যাবে বিজেপিকে।
তার কারণ রাজ্যের করোনা গ্রাফ ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। তারমধ্যে যেভাবে কেন্দ্রীয় বাহিনী এনে এই চার নেতার বাড়ি সহ গোটা এলাকা ঘিরে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তা নজর কেড়েছে গোটা রাজ্যের আমজনতার। সেই সঙ্গে বিপুল সংখ্যক তৃণমূল কর্মী এবং সমর্থকদের জমায়েত।
দিনভর নাটকীয় ঘটনা একের পর এক। যা প্রত্যেক কটাই করোনা বিধির বিরুদ্ধাচরণ করেছে। এই ঘটনার পরপরই ফুটবলার দিব্যেন্দু বিশ্বাস যিনি বিধানসভা নির্বাচনের আগে তৃণমূল ছেড়ে দলবদল করে বিজেপিতে নাম লিখিয়েছিলেন। তিনি বিজেপির সমস্ত পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে দিয়েছেন।
জানিয়ে দিয়েছেন বিজেপির আগামী দিনের কর্মকাণ্ডে তিনি আর কোনো ভাবে যুক্ত হতে চান না। তার কারণ করোনা পরিস্থিতিতে যেভাবে সিবিআই এই গ্রেফতারির ঘটনা শুরু করেছে তাতে আখেরে ক্ষতি হবে রাজ্যের আমজনতার।
দিব্যেন্দু বিশ্বাস এর ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গিয়েছে এই ঘটনা মন থেকে মেনে নিতে পারেননি তিনি। তিনি চান দোষীরা অবশ্যই শাস্তি পাক। তবে বিগত ছয় বছর ধরে কেন সেই মামলার কোনো রকম তদন্ত গতি পেল না ? কেন এই লকডাউন পরিস্থিতিতে সিবিআইকে গ্রেফতার করতে হলো এই চারজনকে ?এ প্রশ্নও তুলেছেন তিনি।
দলবদল করে যারা বিজেপিতে যোগদান করেছেন তাদের অনেকেই এই প্রশ্ন তুলেছেন। মুরলীধর সেন লেন থেকে হেস্টিংসের দলীয় কার্যালয়- কান পাতলেই শোনা যাবে রাজ্য বিজেপির অন্দরে
একের পর এক মন কষাকষির গল্প। যাতে এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে এই পরিস্থিতিতে সিবিআইয়ের এই নাটক না করলেও হতো।
তাদের মতে এরপর পৌরসভা নির্বাচনে বিজেপি আরো ব্যাকফুটে চলে যেতে পারে। একেই বিধানসভা নির্বাচনের বিপর্যয় এখনও তারা কাটিয়ে উঠতে পারেননি। দলের অন্দরে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। তারমধ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনার ছাপ যদি বিজেপির ভোটবাক্সে পরে তার দায় কে নেবে? প্রশ্ন উঠছে তাও।
রাজনৈতিক মহলের মতে যেভাবে রাজ্যের রাজ্যপাল বারবার রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে টুইট করেছেন, দায়ী করছেন মুখ্যমন্ত্রীকে তাতে পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। তৃণমূল কর্মী সমর্থকদের মনে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে। একেই ভোট-পরবর্তী হিংসা অব্যাহত রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে। তারপরে এই ঘটনায় আরো বিভিন্ন জায়গায় বচসাতে জড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে তৃণমূল বিজেপি কর্মীদের। হিংসার ঘটনা বাড়তে থাকলে তাকেই হাতিয়ার করতে পারে ভারতীয় জনতা পার্টি।
রাজ্যপাল এই পরিস্থিতি সামাল দিতে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে পারেন। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই বিষয়টিকে সেই দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তৃণমূল নেতৃত্বরা।
তাই বারংবার সকল কর্মীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছেন তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বরা।ফিরহাদ হাকিমের কন্যাসহ মদন মিত্র এবং সুব্রত মুখার্জির পরিবারের সদস্যরা বারংবার কর্মীদের আবেদন জানাচ্ছেন শান্ত থাকার।
আজ দুপুরে এই মামলার শুনানি হবে। কোন দিকে মোড় নেয় নারদ কান্ডে গ্রেফতার এই চার নেতার রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ সেদিকেই তাকিয়ে রাজ্যবাসী।