নিমতিতা বোমা বিস্ফোরণে: বাংলাদেশ লাগোয়া এলাকায় এত ঠুনকো নিরাপত্তা বলয়?

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের আগে নিমতিতা স্টেশনের ঘটনা নতুন মাত্রা যোগ করেছে রাজ্য রাজনীতিতে। বুধবার রাতেই মুর্শিদাবাদের নিমতিতা স্টেশনে বোমা বিস্ফোরণে গুরুতর জখম হন রাজ্য শ্রম প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন সহ তাঁর অনুগামীরা।

তারপর থেকেই ঘটনাস্থলে বিভিন্ন নমুনা সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন সিআইডি(CID) আধিকারিকরা, সিআইএফ(CIF) এবং ফরেন্সিক ডিপার্টমেন্ট।

বিরোধীদল ইতিমধ্যেই দাবি তুলেছে এই তদন্তভার এনআইএ (NIA) ও সিবিআইয়ের (CBI) হাতে দেওয়ার জন্য। তদন্তভার কার হাতে থাকবে তা নিয়ে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন মুর্শিদাবাদের আমজনতাও।

বৃহস্পতিবার সকালেই নিমতিতা স্টেশনের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল দ্য কোয়ারি। সেখানে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা যায় বিভিন্ন মানুষজন তদন্ত নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন। দ্য কোয়ারির পর্দায় উঠে এসেছে বিভিন্ন মানুষজনের বক্তব্য। সেই সঙ্গে যেভাবে গোটা স্টেশন সহ তার আশপাশের অঞ্চলগুলিতে প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা নমুনা সংগ্রহ অভিযান শুরু শুরু করেছে, সেই চিত্র তুলে ধরেছি আমরা।

নিমতিতা স্টেশনে গিয়ে দেখা গেছে, বুধবার রাতে যখন মন্ত্রী জাকির হোসেন রওনা হয়েছিলেন তিস্তা তোর্সা এক্সপ্রেস ধরার জন্য তখন দুই নম্বর প্ল্যাটফর্মের দিকটা ছিল পুরোপুরি অন্ধকার। কীভাবে একজন মন্ত্রীর ওই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে আলো এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ছিলনা সেই বিষয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে ওয়াকিবহাল মহলের। এ প্রশ্ন করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

যদিও এই ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত সে বিষয়ে এখনো কোন স্বচ্ছ ধারণা তৈরি হয়নি। তবে মুর্শিদাবাদে শাসকদলের গোষ্ঠীকোন্দল যে চরমে সে সম্পর্কে অবহিত খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। বারংবার এই বিষয়ে সর্তকতা অবলম্বন করার কথা বললেও বা গোষ্ঠী কোন্দল মিটিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিলেও আদতে বাস্তব চিত্র অন্য কথা বলছে।

শাসক দল যখন অভিযোগ তুলছে রেলের গাফিলতি নিয়ে সেই সঙ্গে বিরোধীরা এই ঘটনার তদন্তের জন্য সিবিআই এবং এনআইএ দাবি জানাচ্ছেন। সেইসঙ্গে জানা গিয়েছে এলাকায় গরু পাচার চক্র সহ বিভিন্ন অসামাজিক কাজ নিয়ে বারবার প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছেন মন্ত্রী জাকির হোসেন। অভিযোগ দায়ের করেছেন থানাতেও।

এ জন্য একাধিকবার তাঁকে হুমকির মুখেও পড়তে হয়েছে। সম্প্রতি ধরা পড়েছে গরু পাচার চক্রের মাথা এনামুল। জাকির হোসেনের উপর হামলার ঘটনায় রীতিমতো চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে গোটা মুর্শিদাবাদ জেলা জুড়ে।

এই ঘটনার সঙ্গে খাগড়াগড় কাণ্ডের তুলনা কোনভাবেই করা চলে না। তবে একটি বোমার আঘাতে জাকির হোসেন আহত হয়েছেন, সেই বোমা মোটেই কোনরকম ছোটখাটো বোমা ছিল না। যে বা যারাই এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকুন না কেন তাদের উদ্দেশ্যই ছিল জাকির হোসেনকে প্রানে মেরে ফেলা তা কার্যত স্পষ্ট। প্রশ্ন হচ্ছে এখানে। কিন্তু কেন?

খাগড়াগড় কান্ডের কথা এই কারণেই উঠে এল, কারণ বর্ধমানে এই ঘটনা ঘটলেও অপরাধীকে পাকড়াও করা হয়েছিল মূর্শিদাবাদ থেকে। গত বছর মূর্শিদাবাদ থেকেই গ্রেফতার করা হয় আলকায়দা জঙ্গিদের। এই জেলার পাশেই বাংলাদেশ বর্ডার। নিমতিতা স্টেশন থেকে বাংলাদেশ বর্ডার মাত্র ৫ কিলোমিটার। তাহলে সেখানে সুরক্ষা বলয় কেন এত ঠুনকো হবে?

বিরোধীদের কটাক্ষ, যেখানে রাজ্যের মন্ত্রীর কোন সুরক্ষা নেই সেখানে সাধারণ মানুষের সুরক্ষা কিভাবে এই সরকার দেবে ? একইসঙ্গে রাজ্য সরকারের পাল্টা প্রশ্ন, মন্ত্রী যাওয়ার সত্বেও কেন সেখানে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং আলোর কোন ব্যবস্থা ছিল না? দায় এড়াতে পারে না রেলও।

রাজ্য জুড়ে বেজে গিয়েছে নির্বাচনের দামামা। হয়তো মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে ঘোষণা হয়ে যাবে ভোটের দিনক্ষণ। আগামীকাল থেকেই রাজ্যে আসতে শুরু করবে কেন্দ্রীয় বাহিনী। এলাকা ভিত্তিক রুটমার্চ করবেন তারা।

জাকির হোসেনের গুরুতর জখম হওয়ার পর থেকেই রীতিমতো ক্ষোভে ফুঁসছে মুর্শিদাবাদ। সাধারণ মানুষের বিপদে-আপদে বিভিন্ন সময় পাশে থেকেছেন জাকির হোসেন।

রাজনৈতিক মহলের মতে কেন্দ্র বনাম রাজ্য দোষারোপ চলবেই। কিন্তু নির্বাচনের আগে অবিলম্বে উচিত এই ঘটনার সুরাহা বের করা। তবে প্রশ্ন থেকেই গেল আদৌ অপরাধীরা ধরা পড়বে তো? নাকি তরজার চাপে ভিত্তিহীন হয়ে যাবে সুরক্ষা?

সম্পর্কিত পোস্ট