ক্যাশ-ই ফ্যাক্টর? পার্থ ট্রিটমেন্ট অনুব্রতকে নয়, তবে দায়‌ও নেই তৃণমূলের

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ তৃণমূল কংগ্রেসের দুই ‘হেভিওয়েট’ নেতা কয়েকদিনের মধ্যে গ্রেফতার হলেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও অনুব্রত মণ্ডল যে তৃণমূলের অন্যতম স্তম্ভ তার আর বলার অপেক্ষার রাখে না। তবে এসএসসি কেলেঙ্কারিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের গ্রেফতার হওয়ার পর তার সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস যে আচরণ করেছিল অনুব্রতর ক্ষেত্রে তা কিছুটা হলেও আলাদা হল।

পার্থ ও অনুব্রতর মধ্যে ট্রিটমেন্টের এই ফারাক ছাড়া কেন তা বুঝতে হলে রাজনীতির একটা বেসিক বিষয় খেয়াল করতে হবে। প্রমাণ-অপ্রমাণ, ঠিক-ভুল, ন্যায়-অন্যায়ের থেকেও রাজনীতিতে অনেক বেশি কাজ করে পারসেপশন বা ধারণা। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখার্জির দুটি ফ্ল্যাট থেকে প্রায় নগদ ৫০ কোটি টাকা উদ্ধার হওয়ার পর রাজ্যের এই সদ্য প্রাক্তন মন্ত্রী তথা তৃণমূলের সদ্য অপসারিত মহাসচিব সম্বন্ধে জনমানসে ছি-ছিক্কার পড়ে যায়।

শুধু তাই নয়, পার্থ ঘনিষ্ঠ একাধিক মহিলার নাম এই পর্বে সামনে উঠে আসায় রাজ্যের এই হেভিওয়েট রাজনীতিবিদের চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তুলতে শুরু করে আমজনতার একটা বড় অংশ। কিন্তু অনুব্রতর ক্ষেত্রে এর কোনটাই হয়নি। বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে যে গরু পাচার মামলার অভিযোগ, তার আর্থিক মূল্য আড়ে বহরে অনেক বড়। কিন্তু কেষ্টর বোলপুরের বাড়ি থেকে কোনও টাকা উদ্ধার করতে পারেনি সিবিআই।

এক্ষেত্রে অনুব্রতর নামে-বেনামে বিপুল সম্পত্তির বেশ কিছু খসড়া প্রকাশ্যে এসেছে। কিন্তু সেগুলো আদৌ কেষ্ট মণ্ডলের কিনা বা তিনি কাউকে দিয়ে বেনামে কিনেছিলেন কিনা সেটা তদন্ত সাপেক্ষ। নগদ টাকার মজাটাই হল, মানুষ চোখের সামনে তাড়া তাড়া নোট দেখতে পেয়েছে। যেটা পার্থর ক্ষেত্রে ঘটেছে। তাছাড়া অনুব্রতর সঙ্গে মহিলাদের নাম‌ও জড়ায়নি।

পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে এসএসসি কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠায় রাজ্যের শিক্ষিত ছেলেমেয়েদের ভবিষ্যৎ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার মতো একটা সেন্টিমেন্টাল ব্যাপার‌ও জড়িয়ে আছে। কিন্তু অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে অভিযোগটাকে অনেক বেশি রাজনৈতিক রং দিয়ে দিতে সফল হয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস। তাই তাঁকে সিবিআই গ্রেফতার করার পরের দিনই রাজ্যজুড়ে তারা পথে নেমে ইডি-সিবিআইয়ের পক্ষপাত মূলক আচরণের বিরোধিতা করেছে।

Anubrata Mondal Arrested : ১০ দিনের CBI হেফাজতে কেষ্ট, বীরভূমের বাঘ যেন বেড়াল ! কটাক্ষ বিরোধীদের

এখানে খেয়াল রাখতে হবে, সরাসরি অনুব্রত মণ্ডলকে সমর্থন করে তৃণমূল পথে নামেনি। বরং বৃহস্পতিবার সাংবাদিক বৈঠকে রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য স্পষ্ট বলে দিয়েছেন, অনুব্রত যদি অন্যায় করে থাকে তার শাস্তি তাকে পেতে হবে। সেই সঙ্গে অবশ্য কোন প্রমাণের ভিত্তিতে তাঁকে গ্রেফতার করা হল সেই প্রশ্ন তুলছে তৃণমূল।

শুক্রবার তারা পথে নেমে যে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে তার উদ্দেশ্যই হল, সারদা-নারদ কাণ্ডে শুভেন্দু অধিকারী অভিযুক্ত হলেও তাঁর বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন্দ্রীয় এজেন্সি। এইভাবে সাম্প্রতিক বিতর্ককে পুরোপুরি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণে ভেঙে ফেলতে চাইছে রাজ্যের শাসক দল।

অবশ্য এই গোটা বিষয়টিকে রাজনৈতিক অ্যাঙ্গেল দেওয়া ছাড়া তৃণমূলের হাতে এই মুহূর্তে বিকল্প কম। কারণ দোষ করুক বা না করুক, তাদের এক ঝাঁক শীর্ষস্থানীয় নেতা মন্ত্রী কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্তের আওতায় আছেন। যদি হঠাৎই অতি সক্রিয় হয়ে এজেন্সি একের পর এক গ্রেফতারি শুরু করে তবে জনগণের মধ্যে পার্সেপশন বা ধারণা তৃণমূলের সম্পূর্ণ বিপক্ষে চলে যেতে পারে। তাই প্রমাণ বা অপ্রমাণের বাইরে গিয়ে পুরোপুরি রাজনৈতিক কারণে তারা অনুব্রত মণ্ডলকে সম্পূর্ণভাবে ঝেড়ে ফেলেনি।

খাতায়-কলমে গ্রেফতারের পরেও তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি পদে আছেন অনুব্রত। তবে সবকিছু বুঝে উঠে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও পাঁচ দিন সময় লেগেছিল তৃণমূলের। সেই হিসেবে অনুব্রত মণ্ডলের বিরুদ্ধে রাজ্যের শাসক দল চূড়ান্ত কোন‌ও ব্যবস্থা নেবে কিনা তা জানতে আরও কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতেই হবে। কিন্তু পার্থর ক্ষেত্রে বিষয়টিকে রাজনৈতিক রং দেওয়া যথেষ্ট কঠিন ছিল। যেহেতু অনুব্রত মণ্ডলের গ্রেফতারি অনেকটাই রাজনৈতিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাই তৃণমূল কংগ্রেস এক্ষুণি তাঁর পাশ থেকে নাও সরে দাঁড়াতে পারে।

সম্পর্কিত পোস্ট