‘থোড় বড়ি খাড়া, খাড়া বড়ি থোড়’, রাজনীতি আমার সরকার তোর
শুভজিৎ চক্রবর্তী
আবির্ভাবের সময় থেকেই মানুষ অস্তিত্ব রক্ষার জন্য লড়াই করে আসছে। মানসিক এবং সামাজিক প্রতিকুলতাকে বাদ দিয়ে প্রকৃতির সঙ্গে লড়াইতে জয়ী হয়েছ মানুষ।
নতুন করে নিজেদের আপগ্রেড করে আজ হোমোসেপিয়েন্সদের মধ্যে উন্নতশীল জীব হল মানুষ। কিন্তু ২১ শতকে এসেও মানুষের চিন্তাধারার গতিপ্রকৃতি একই রয়ে গিয়েছে।
কথাটা আরও বলা এই কারণে যখন মানুষ এখন গণতান্ত্রিক ক্ষমতার বলে বলীয়ান। তাও সেই ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে গিয়ে কোথাও যেন একটু ভিড়মি খাচ্ছে।
অন্যদিকে গণতান্ত্রিক ক্ষমতাকে নিংড়ে সেই ক্ষমতায় আরও বলীয়ান হয়ে উঠছে মানুষ। তার উচ্ছিষ্ট অংশটুকু যাচ্ছে মাসের গালে। পরিবর্তে জাতি-ধর্ম-বর্ণের দেওয়াল মানুষের মধ্যে দুরত্ব বাড়িয়ে তুলছে।
এখানে বলে রাখা ভালো, জাতি-বর্ণ-ধর্ম শেষ কথা নয়। অর্থনৈতিক বিভেদের চেষ্টাও এক শ্রেণীর মানুষ প্রস্তর যুগ থেকে করে আসছে।
বিষয়টি আরও ভয়ানক হয়ে ওঠে যখন অস্তিত্ব সংকটের স্লোগান দিয়ে দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করা হয়। কতগুলো বিতর্কিত মন্তব্য আধপেটা মানুষের রক্তচাপ বাড়িয়ে তোলে। যার ফল স্বরুপ সাম্প্রতিক কালের দিল্লির ঘটনা।
ঠিক এই সময়েই গণতান্ত্রিক ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে মানুষের উচিত ছিল ক্ষমতার বিরুদ্ধে প্রশ্ন করা।
পরিযায়ীরাই করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণ হবে না তো!
কিন্তু প্রস্তর যুগ থেকেই “আপাতত নিস্তার” পেতে বিপদ রেখা থেকে সামান্য সরে খানিকটা নিউট্রাল পয়েন্টের দিকে ছুটে যেতে দেখা গিয়েছে। আর ঠিক একই সময়ে কোভিড-১৯ ডানা ছেঁটে তাকে ঘরবন্দি করে দিয়েছে।
সরকারী সিদ্ধান্ত যখন জীবনের ভবিষ্যদ্বাণী করতে শুরু করেছে, তখনই মানসিক “নিউট্রালিজম” এর কারণে মাসেরা ব্যাকফুটে চলে গিয়েছে।
২০১৪ থেকে ২০১৯ এর কথাই ধরা যাক। দেখা যাবে দেশের প্রতিটা লোকসভা কেন্দ্রে প্রতিদিন কৃষক মৃত্যুর খবর শিরোনামে। কালো ধোঁয়ার মত সেই খবরও খুব তাড়াতাড়ি বিলীন হয়ে গেল।
দেশের ২৮ শতাংশ জিডিপি যাদের হাতে ছিল, তারাই হঠাৎ করে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে উঠল। বরং বালাকোট এবং এয়ার স্ট্রাইকের মত ঘটনা সরকারের ক্ষমতাকে জনসমক্ষে আরও প্রকট করে তুলল।
সেনাবাহিনীর তুলনায় সরকারের ক্ষমতাকে খানিকটা রূপক কাহিনী হিসাবে দেখানো হল। কিন্তু চাষিদের অবস্থা যে তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই থেকে গেল।
কোভিড এবং আম্ফান বিপর্যয়ে যে পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে তা ভরপাই করতে কয়েক বছর লেগে যাবে। এই মুহুর্তে দেশকে অর্থনৈতিক দিক থেকে চাঙা করার পাশাপাশি ক্ষুধা নিবারণ মসিহা হলেন কৃষকরা।
১৩০ কোটি মানুষের পেটের খিদের মেটানোর ক্ষমতা একমাত্র কৃষকদেরই যে রয়েছে, তা আদতে সরকারও বুঝতে পেরেছে। তাই আর্থিক প্যাকেজের ক্ষেত্রে কৃষকদের ওপর বেশী করেই নজর দিয়েছে ক্ষমতা পক্ষ।
ঠিক তেমনই ইকোনমিকাল সার্কুলেশনের ক্ষেত্রেও শ্রমিক শ্রেণীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে। কথাটা আজকের দিনে আরও প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। সারা দেশে ছেয়ে গিয়েছে পরিযায়ী শ্রমিকে।
করোনা আবহে প্রশ্নের মুখে ভবিষ্যৎ, উত্তর আছে তো সরকার বাহাদুর?
স্মল প্রোডাক্ট প্যাকেজিংয়ের প্রয়োজনীয়তা আমাদের দেশে কতটা তা মধ্যবিত্তের সংখ্যা দেখে বোঝা যায়। তবুও লকডাউনের আগে এই মানুষগুলোকে নিয়ে সরকারের কোনও পরিকল্পনা না থাকাটা একটা অবাক করা ঘটনা।
শেষমেশ অর্থনীতির মাজা শক্ত করতে মনরেগা, এবং ১০০ দিনের কাজকেই গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার।
প্রকল্পিত টাকার সার্কুলেশনের মাধ্যমে দেশের আর্থিক পরিকাঠামোকে চাঙা করতে চাইছে সরকার। যেটা অনেক আগেই অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বন্দোপাধ্যায় বলে আসছেন।
তবে আম্ফান এবং করোনা দুইয়ের বিপর্যয়ের পর পঙ্গপালের আক্রমণ ভারতের মজুত ভান্ডারকে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান এবং উত্তরপ্রদেশের পর মাহারাষ্ট্রে পৌঁছে গিয়েছে লক্ষ লক্ষ পঙ্গপালের। মোট ক্ষতির অংশ ৫০০ টাকায় কি সম্ভব? এই প্রশ্নের উত্তর কি সরকারের কাছে রয়েছে?
এই সব প্রশ্ন থেকেই হয়তো দুরে থাকতে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক সম্মেলন এড়িয়ে যাচ্ছেন। কারণ ২০ লক্ষের অধিক শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার ব্যবস্থা করার পরেও সরকারের দুর্বলতা প্রকট হয়ে উঠেছে।
প্রায় ৬০ ঘন্টার অধিক সময় ধরে অনশনে থাকার পর পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু সরকারের অন্যতম ব্যর্থতাকে সামনে এনেছে।
পরিবর্তে ইন্দো চায়না বর্ডারের গরমাগরম পরিস্থিতি এই মুহুর্তে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চতুর্থ দফায় এলাকাভিত্তিক লকডাউনেই সংক্রমনের হার কমবে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা
২০১৪ এবং সাম্প্রতিক চিনা প্রেসিডেন্ট জিন পিংয়ের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের কথা আমাদের সকলের জানা। উহান সামিটের পর চেন্নাই সামিটের চিনের সঙ্গে ডিপ্লোমেটিক রাজনীতির ক্ষেত্রেও মোদি সরকার ব্যর্থ, তা বলার অবকাশ থাকে না।
ঠিক এই সময়েই পূর্ব গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি রাজ্যের কথা মাথায় রেখে ১০ কোটি মানুষের ভার্চুয়াল র্যালির কথা ঘোষণা করেছে বিজেপি।
এই সময় অভুক্ত মানুষের সংখ্যা গোটা দেশে মধ্যে সর্বাধিক হয়ে উঠেছে। মানুষকে ছুটে যেতে হচ্ছে নিজেদের শুণ্যস্থানের দিকে৷ আর একের পর এক হটকারি সিদ্ধান্ত সরকারের নির্বুদ্ধিতাকে আরও প্রকট করে তুলেছে।
তবে শুধুমাত্র সরকার নয়।প্রশ্ন থাকছে বিরোধীদের একাউন্টেবিলিটি নিয়েও। কলকাতা পুরসভার প্রশাসকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তার দলের এক মন্ত্রী। অতএব শাক দিয়ে যে মাছ ঢাকা যায় না তা পরিষ্কার হয়ে গেল।
এক দল অন্য দলের ব্যর্থতাকে তুলে ধরছে সেটা স্পষ্ট। বিষয়টা অনেকটা সাংবাদমাধ্যমে “তেরি বাড়ি অব মেরি বাড়ি”র মতো মনে হচ্ছে।
গাছ কেটে, ছবি না তুলে যদি বিরোধী দলের অন্যতম নেতা যদি ত্রানের দিকে নজর দিতেন তাহলে সাধারণ মানুষ বেশী উপকৃত হতেন। যদিও হেলিকপ্টারের ওপর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা বোঝা যায় না। দূর থেকে সর্ষের ক্ষেত ঘন বলে মনে হয়। তাই উচিৎ দূর থেকে নয় বরং কাছে গিয়ে সর্ষের ভুতকে বের করা।