আবার ময়দানে রেড ভলেন্টিয়ার্স, সবকিছু ঠিকভাবে করা যাবে তো? আশঙ্কা থাকছেই
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ গত তিন-চার দিন ধরে নির্দিষ্ট একটি ধারার বেশকিছু পোস্টার সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরে আসছে। কোথাও লেখা ‘আমরা আপনাকে মরতে দেব না’, আবার কোথাও ‘চিন্তা নেই, আমরা আপনার পাশে আছি’। তলায় লাল কালিতে লেখা ‘রেড ভলেন্টিয়ার্স’।
আসলে বর্তমান পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বোধহয় আবার লাল কালিতে লেখা ওই শব্দগুলি বড় বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে। বা বলা যায় লাল কালিতে লেখা রেড ভলেন্টিয়ার্স শব্দ বন্ধনীর প্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠার সময় হয়ে গেল আবার!
আসলে রাজ্যে আবার হু হু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। এখনও পর্যন্ত যা খবর তাতে এই তৃতীয় ঢেউয়ে হাসপাতলে শয্যার আকাল ঘটেনি। এখনও অব্দি বাজারে অক্সিজেনের অভাব দেখা দেয়নি। বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে এবারে হাসপাতালে শয্যার অভাব বা বাজারে অক্সিজেনের সঙ্কট নাও দেখা দিতে পারে।
এখানেই প্রশ্ন, তাহলে রেড ভলেন্টিয়ার্সদের প্রয়োজনটা কোথায়? তার মানে কী পুরোটাই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে রাজনীতির ছক! এই প্রশ্ন মাথায় আসার আগে একবার নিজেকে প্রশ্ন করুন, আপনার মনে অহেতুক সন্দেহ বাসা বাঁধেনি তো? কারণ ওমিক্রন হোক আর যাই হোক, করোনা আক্রান্ত হওয়া মানেই নির্দিষ্ট ব্যক্তির হোম আইসোলেশনে চলে যাওয়া।
অনেকেরই গোটা পরিবার করোনায় আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থায় তারা খাবে কী? রেড ভলেন্টিয়ার্সরা শুধু অক্সিজেন সরবরাহ করে তা নয়, বিগত দুটি ঢেউয়ে দেখা গিয়েছে তারা প্রয়োজনে সাধারণ মানুষের বাড়িতে বাজার করে দিয়ে আসে।
আবার প্রয়োজনমতো রান্না করা খাবার পৌঁছে দেয় মানুষের বাড়িতে। নানান দিক থেকে যে খবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে ইতিমধ্যেই রেড ভলেন্টিয়ার্সদের এই কাজ কলকাতা সহ রাজ্যের নানা এলাকায় জোরকদমে শুরু হয়ে গিয়েছে। আসলে পরিস্থিতির ফেরে তারা শুরু করতে বাধ্য হয়েছে।
ইতিমধ্যেই রাজ্য সরকার একগুচ্ছ কড়াকড়ির নির্দেশিকা জারি করেছে। তবে পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে তাতে আগামী দিনে রাজ্যে আংশিক লকডাউন হলেও হতে পারে। আর তাহলেই দিন আনি দিন খাই মানুষদের রুটিরুজিতে প্রথম কোপ পড়বে। এই অবস্থায় বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে রেড ভলেন্টিয়ার্সরা দাবি করছে তারা কাউকে না খেয়ে থাকতে দেবে না।
অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায় তাদের এই আশ্বাস বাণীতে ভরসা রাখতে পারে মানুষ। সেক্ষেত্রে করোনা আক্রান্তের পাশাপাশি যাদের উপার্জন বন্ধ তাদেরও পেট ভরার কোনও একটা হিল্লে হয়তো করে দেবে এই বামপন্থী স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা।
পাশাপাশি বামেদের শ্রমজীবী ক্যান্টিন তো আছেই। এই মুহূর্তে যাদবপুরের শ্রমজীবী ক্যান্টিনটি জোরকদমে চলছে। পাশাপাশি বজবজ সহ আরও বেশ কিছু জায়গায় তাদের শ্রমজীবী ক্যান্টিন চলছে। পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় বেশ কিছু শ্রমজীবী ক্যান্টিন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
শোনা যাচ্ছে রেড ভলেন্টিয়ার্সরা আবার সেই শ্রমজীবি ক্যান্টিনগুলি চালু করার কাজ শুরু করে দিয়েছে। আর সাদা চোখেই দেখা যাচ্ছে এই শ্রমজীবী ক্যান্টিনগুলোতে আবার একটু একটু করে মানুষের ভিড় বাড়ছে।
রেড ভলেন্টিয়ার্সরা যখন সাধারণ মানুষের সহায়কের ভূমিকা পালন করছেন, তখন অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে একটি সংশয় থেকে যায়। স্বেচ্ছায় মানুষের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়া এই তরুণ-তরুণীদের আবার পুলিশি হয়রানির মুখে পড়তে হবে না তো?
করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় দেখা গিয়েছে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর উদ্যোগের মাঝেই অযথা পুলিশি হয়রানির মুখে পড়তে হয়েছিল রেড ভলেন্টিয়ার্সদের। বারবার অভিযোগ উঠেছে শাসকদল ইচ্ছে করে তাদের কাজে বাধা সৃষ্টি করছে। এবারে এমনিতেই সংক্রমণের হার মারাত্মক। এই পরিস্থিতিতে আবার যদি এইরকম বাধা সৃষ্টির ঘটনা ঘটে তবে আমজনতার ক্ষতি হবে বেশি।
মানুষের জন্য কাজ করতে গিয়ে রাজ্যে বেশকিছু রেড ভলেন্টিয়ার্সের মৃত্যুও হয়েছে অতীতে। তবু তারা হাল ছাড়েননি। তাইতো পুর নির্বাচনে প্রার্থী হয়েও কোনও কোনও রেড ভলেন্টিয়ার্সকে প্রচারের বদলে করোনা আক্রান্তের বাড়ি স্যানিটাইজ করতে বেশি দেখা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে এই বামপন্থীদের স্পষ্ট বার্তা, মানুষ আগে, ভোটের রাজনীতি পরে।
শুভেন্দু এখন বিজেপির বোঝা, ৪ পুরনিগমের নির্বাচনে সেই ক্ষত কাটিয়ে ওঠার পরীক্ষায় বিজেপি
তবে কী রেড ভলেন্টিয়ার্সরা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির বাইরে গিয়ে কাজ করছেন? এক কথায় বলা যায়- না। বিশেষ করে এই তৃতীয় ঢেউয়ের সময় সোশ্যাল মিডিয়ায় যে সমস্ত পোস্টার চোখে পড়ছে সেখানে রেড ভলেন্টিয়ার্স লেখার তলায় আরেকটি লেখা নজরে আসছে ‘পশ্চিমবঙ্গ সিপিএমের পরিচালিত একটি উদ্যোগ’। অর্থাৎ স্পষ্ট বার্তা, এটি সিপিএমেরই একটি মানবদরদী উদ্যোগ।
বিভিন্ন বামপন্থী নেতার সঙ্গে কথা বলে বোঝা গিয়েছে রেড ভলেন্টিয়ার্স নিয়ে তারা অবশ্যই রাজনীতিতে আছে, কিন্তু ভোটের পাশা খেলায় নেই! তাদের দাবি বামপন্থী রাজনীতির আদর্শ থেকেই রেড ভলেন্টিয়ার্সের পথ চলা শুরু। সেই জন্যই ভোট প্রচারের বদলে তাঁরা মানুষের জীবন রক্ষায় বেশি গুরুত্ব দেন।
তবে রেড ভলেন্টিয়ার্সদের ভাবমূর্তিকে সিপিএম যে ভোট ময়দানে পুঁজি করার চেষ্টা করছে সেটাও দেখা গিয়েছে। কলকাতা পুরসভা নির্বাচনের পর রাজ্যের আসন্ন ৪ পুরনিগমের নির্বাচনেও তারা এক ঝাঁক রেড ভলান্টিয়ার্সকে প্রার্থী করেছে। তবে তাতে ভুল কিছু নেই। যারা দিন-রাত উদয়াস্ত পরিশ্রম করে মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছে তাদেরকে সামনে এগিয়ে দেওয়াটাই সঠিক রাজনীতি।
এখানে সাধারণ মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে শাসক তৃণমূল সহ বাকি রাজনৈতিক দলগুলির কাছে একটাই চাওয়া, রেড ভলেন্টিয়ার্সের সঙ্গে কোনও প্রতিযোগিতায় নয়, বরং আপনারাও এই সময় নিজেদের মতো করে মানুষের পাশে এসে দাঁড়ান। তাতে মানুষেরই ভালো হবে। আগে তো মানুষ বাঁচুক, ভোটের হিসাবটা না হয় পরে করা যাবে!