Russia-Ukraine war : রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু, ভয়াবহ প্রভাব পড়তে চলেছে ভারতের উপর

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ বৃহস্পতিবারকে বলা হয় লক্ষ্মীবার। কিন্তু এদিনেই লক্ষ্মীহারা হল বিশ্ব বাজার। বৃহস্পতিবার দিনের শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি। চোখ খুলতে না খুলতেই খবর ছড়িয়ে পড়ে ইউক্রেনে ভয়াবহ হামলা শুরু করেছে রাশিয়া ( Russia-Ukraine war )।

থই খুঁজে পাচ্ছে না আমেরিকার আশীর্বাদধন্য দেশটি। তৎক্ষণাৎ বাজার থেকে বিনিয়োগ করা অর্থ তুলে নিতে শুরু করেন লগ্নিকারীরা। বাজার খোলার এক মিনিটের মধ্যে গায়েব হয়ে যায় ৭ লক্ষ কোটি টাকা!

দিনের শুরুতেই সেনসেক্স পরে যায় ১,৪৫৮ পয়েন্ট! নিফটি কমে ৪১৬ পয়েন্ট। শুধু ভারতের বাজার নয়, সাংহাই টোকিও সিওলের মতো এশিয়ার বড় বড় শেয়ারবাজারের পাশাপাশি ইউরোপ ও আমেরিকার শেয়ার সূচকও প্রবল গতিতে কমতে শুরু করেছে।

বিনিয়োগকারীদের আশঙ্কা দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব। তাই কেউ আর বাজারে অর্থ ফেলে রাখতে চাইছে না। ক্ষতি স্বীকার করে হলেও বাজার থেকে অর্থ তুলে নেওয়ার হিড়িক পড়ে গিয়েছে।

কিন্তু ভারতের বিপদ শুধু শেয়ার বাজারের মধ্যে আটকে নেই। ইউক্রেনের সঙ্গে রাশিয়ার ( Russia-Ukraine war )যুদ্ধ যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় তবে তার ভয়াবহ প্রভাব পড়বে ভারতীয় অর্থনীতির উপর।

Russia-Ukraine war

ভারতের সঙ্গে ইউক্রেন ও রাশিয়া উভয়েরই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। দেশের কয়েক হাজার পড়ুয়া ইউক্রেনে চিকিৎসাশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেন। পাশাপাশি সে দেশে চাকরি সূত্রে বসবাস করূন অসংখ্য ভারতীয়। সব মিলিয়ে ইউক্রেনে বসবাসকারী ভারতীয়র সংখ্যা কুড়ি হাজারেরও বেশি! এর মধ্যে কিছু পড়ুয়াকে দেশে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলেও সেখানে এখনও কুড়ি হাজারের কাছাকাছি ভারতীয় আটকে আছে।

এদিকে রাশিয়ার প্রবল মিসাইল হানার কারণে বিমান চলাচল বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে ইউক্রেন সরকার। এই পরিস্থিতিতে কীভাবে আটকে পড়া ভারতীয়দের উদ্ধার করা হবে তা বুঝে উঠতে পারছে না কেউ। তাছাড়া শেষপর্যন্ত নিরাপদে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনলেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে যাবে। যার মোকাবিলা কেন্দ্রীয় সরকার কীভাবে করবে সেটাই দেখার।

এই বিপুল পরিমান ডাক্তারি ছাত্র দেশে ফিরে এলে তাদের পঠন-পাঠন শেষ করার বন্দোবস্ত করতে হবে সরকারকে। ইউক্রেন থেকে ফিরে আসা পেশাজীবীদের কর্মসংস্থানের বিকল্প বন্দোবস্তের বিষয়টিও ভোগাতে পারে সরকারকে।

আমেরিকা ইতিমধ্যেই রাশিয়ার ওপর বড় ধরনের অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। অবশ্য এই অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা সরাসরি হামলার আগের ঘটনা। বৃহস্পতিবারের পর সেই নিষেধাজ্ঞা আর‌ও কঠোর হতে পারে। সেক্ষেত্রে আমেরিকা যদি রাশিয়ার বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে তবে মহা বিপদে পড়বে ভারত।

কারণ ভারতে বিভিন্ন রুশ সংস্থার বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ আছে। মার্কিন সংস্থারও বিনিয়োগ আছে ভারতে। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকার আমেরিকার নিষেধাজ্ঞা মানলেও চাপ না মানলেও চাপ।

Russia-Ukraine crisis : ইউক্রেনে ঢুকতে শুরু করেছে রাশিয়ার সেনা, ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই বিধ্বস্ত দেশটি

মার্কিন নিষেধাজ্ঞা মেনে নিলে রুশ কোম্পানিগুলির বিনিয়োগ হারাতে হবে। রাশিয়া সুন্দর সম্পর্ক তলানিতে গিয়ে পৌঁছবে নয়াদিল্লির। আবার মার্কিন নিষেধাজ্ঞা না মানলে আমেরিকা তাদের বিপুল বিনিয়োগ ভারত থেকে তুলে নিতে পারে। তখন আরও বড় বিপদের মুখে পড়বে ভারতীয় অর্থনীতি।

শুধু তাই নয় মনমোহন সিংয়ের পর নরেন্দ্র মোদি জমানাতেও আমেরিকার সঙ্গে ভারতের সখ্যতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের অন্যরকম বিশ্বস্ততার সম্পর্ক আছে। এদিকে বাজারের কথা ভাবলে আমেরিকার দিকে ঝুঁকে পড়া যেমন সম্ভব, তেমনই বিপুল পরিমাণ সামরিক সাহায্য সহ বিপদের দিনে বন্ধুত্বের কথা ভাবলে রাশিয়ার প্রতি অনুগত থাকা উচিত।

আপাতত জটিলতা এড়াতে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়েছে ভারত। কিন্তু পরিস্থিতি যেদিকে যাচ্ছে তাতে এই যুদ্ধ যদি তাড়াতাড়ি শেষ না হয় সেক্ষেত্রে নিরপেক্ষ অবস্থান নিয়ে বেশিদিন চলা যাবে না। কারণ পরিস্থিতির চাপে কোন‌ও না কোনও একটা পক্ষ নিতে বাধ্য হবে ভারত।

আর যে দিকেই ঝুঁকবে দেশ অমনি অপর পক্ষ থেকে ধেয়ে আসবে ভয়াবহ অর্থনৈতিক আক্রমণ। পাশাপাশি রাশিয়া বিশ্বের অন্যতম জ্বালানি সরবরাহকারী দেশ। তাই এই যুদ্ধ ( Russia-Ukraine war )যতদিন দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং মার্কিন অবরোধ যত কঠোর হবে ততই বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের সরবরাহ কমবে। অর্থাৎ জ্বালানির দাম আরও বাড়বে। এমনকি তা সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে!

তাই যুদ্ধের রোমান্টিসিজম ছেড়ে যত দ্রুত ইউক্রেন-রাশিয়া সংঘাত মিটে যাবে ততই মঙ্গল আমাদের। ভারতের।

সম্পর্কিত পোস্ট