নজিরবিহীন, রাজ্যপালের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ শিবসেনার
দ্য কোয়ারি ডেস্ক :বাংলার মধ্যে নজিরবিহীন ঘটনা তো বটেই, ভূ-ভারতেও এর আগে কোনও দিন এই ধরনের ঘটনা ঘটেছে কিনা জানা যায়নি।
ক্ষমতাসীন রাজ্যপালের বিরুদ্ধে থানায় জমা পড়েছে অভিযোগ। তাও এই বাংলায়। অভিযোগ জানানো হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের বিরুদ্ধে। অভিযোগ জানিয়েছেন শিবসেনার রাজ্য সম্পাদক অশোক সরকার।
বিধাননগর পূর্ব থানায় এই অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। সেই অভিযোগ পত্রে অনুরোধ জানানো হয়েছে বিষয়টি যেন এফআইআর হিসাবে গৃহিত হয়।
বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযোগ গৃহীত হলেও তা এফআইআর হিসাবে গৃহীত হবে কিনা সেই বিষয়ে নবান্নের মত চাওয়া হয়েছে।
তবে যেহেতু ক্ষমতাসীন রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতি কিছু বিশেষাধিকার ভোগ করেন তাই ওই অভিযোগ এফআইআর হিসাবে গৃহীত নাও হতে পারে। কিন্তু এই অভিযোগ নিয়ে বস্তুত বিব্রত বিধাননগর কমিশনারেটের কর্তারা।
ইতিমধ্যেই তাঁরা এই বিষয়ে নবান্নের দ্বারস্থ হয়েছেন বলেও খবর।
ওই অভিযোগপত্রে জানানো হয়েছে, রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর রাজ্যে গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত সরকারের প্রতি ক্রমাগত আক্রমণ করে চলেছেন ও চূড়ান্ত অসম্মানজনক ভাবে মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যের অনান্য মন্ত্রীদের আক্রমণ করে চলেছেন।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাঁর ভাষা ও শব্দের প্রয়োগ অন্ত্যন্য নিন্দানীয় ও অশালীন যা তাঁর পদের গরিমাকে নষ্ট করছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা বাংলা ও বাঙালির সংস্কৃতিকেও অপমান করেছে।
এরপরই অশোকবাবু অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁর এউ অভিযোগপত্রকে যেন পুলিশ এফআইআর হিসাবে গ্রহণ করে। পুলিশ ওই অভিযোগপত্র গ্রহণ করলেও আইনি বাধ্যবাধ্যকতায় সম্ভবত তা এফআইআর হিসাবে গৃহীত হবে না।
যদিও এই বিষয়ে নবান্নের অভিমত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে। একই সঙ্গে এই ঘটনার জেরে জাতীয়স্তরের রাজনীতিতেও নয়া সমীকরণের জন্ম দিতে চলেছে বলে অনেকেই মনে করছেন।
বাংলায় এর আগেও নানান সময়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের মতবিরোধ ঘটেছে। সাময়িক দূরত্বও তৈরি হয়েছে। কিন্তু বর্তমান রাজ্যপালের মতো এর আগে কোনও রাজ্যপালই রাজ্য সরকার তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের ও অনান্য মন্ত্রীদের প্রকাশ্য বিরোধীরা বা অপনামিত করার রাস্তায় হাঁটেননি।
জগদীপ ধনকর কার্যত আসা ইস্তক থেকে রাজ্য সরকারের বিরোধীতা করার পাশাপাশি কার্যত বিজেপির সুরে সুর মিলিয়ে শাসক দল, মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যের অনান্য মন্ত্রীদের ট্যুইট করে আক্রমণ করে চলেছেন। নিত্যদিনই কার্যত সেই কাজ তিনি করে থাকেন।
তাঁর এহেন কর্মের দরুন বেশ কিছু ক্ষেত্রে যেমন সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হয়েছে একাধিকবার তেমনি বেশ কিছু ক্ষেত্রে আক্রমণ শালীনতার সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছে। এর আগে দেশে কোনও রাজ্যেই কোনও রাজ্যপাক এই ধরনের নেক্কারজনক ভূমিকায় অবতীর্ন হননি।
একই রকম ভাবে রাজ্যপালের বিরুদ্ধেও পুলিশের কাছে এই ধরনের অভিযোগ দায়ের হয়নি। যদি নবান্নের তরফে অশোক সরকারের অভিযোগপত্র এফআইআর হিসাবে গৃহীত হয় তাহলে কিন্তু এই ঘটনার জল অনেক দূর অবধি গড়াবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
একই রকম ভাবে রাজ্য ও জাতীয় স্তরের রাজনীতিতেও শিবসেনা বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে চলেছে। একসময়কার বিজেপির প্রথম জোটসঙ্গী আজ বছর দুই ধরেই এনডিএ ছাড়া। মহারাষ্ট্রে একসময় দুই দল জোট বেঁধে সরকার গড়লেও এখন তাঁরা পরস্পর বিরোধী।
সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর ঘটনায় দুই দলের বিরোধীতা কার্যত চরমে উঠেছে। এই রকম অবস্থায় বাংলায় শিবসেনা নেতার জগদীপ ধনকরের মতো ব্যক্তিত্বের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করা খুব হালকা বিষয় নয়।
অনেকেই মনে করছেন বিজেপি বিরোধীতায় এই বাংলার পাশাপাশি এবার এই দুই দল জাতীয় স্তরের রাজনীতিতেও নতুন জোট গড়ার পথে আগামী দিনে এগোতেও পারে।