‘দুর্গাপুজোর একাল-সেকাল’- কলমে সুবল ভৌমিক
করোনা কালে ত্রস্ত গোটা বিশ্ব। কেমন ছিল ছেলেবেলার পুজো? কেমন ভাবেই বা কাটালেন করোনা আবহে দুর্গাপুজো? শেষলগ্নে পুজো সংখ্যার বিশেষ প্রতিবেদনে কলম ধরলেন অনেকেই।
সুবল ভৌমিক, কংগ্রেস নেতা, ত্রিপুরা
ভারতবর্ষে যে সমস্ত রাজ্যে বাঙালিরা সংখ্যাগরিষ্ঠ তাদের মধ্যে একটি হল ত্রিপুরা। স্বাধীনতার আগে যখন ত্রিপুরা আলাদা করে রাষ্ট্র ছিল, তখন এখানকার প্রধান ভাষা ছিল বাংলা।
এই রাজ্যের সঙ্গে বাঙালির একটি দীর্ঘ সময়ের যোগ রয়েছে। বীরচন্দ্র মাণিক্য রাজা থাকাকালীন রবীন্দ্রনাথ সাতবার ত্রিপুরা এসেছেন। এখানেই বিদ্যাসাগর ১৯ মাস চাকরি করে গিয়েছেন। বাংলা ভাষার প্রচার প্রসারে ত্রিপুরার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
তাই দুই রাজ্যের মেলবন্ধনে এরাজ্যেও দুর্গাপূজা সাড়ম্বরে পালিত হয়। সারা ভারতবর্ষ থেকে মানুষ আসেন। চন্দননগর থেকে আলোকসজ্জা আসে। টাকি, নদীয়া থেকে ঢাকিরা আসেন।
দীর্ঘদিন বাদে হয়তো করোনার কারণে মানুষের সংখ্যা এবারে কম হবে। বাংলাদেশ, অসম, মিজোরামে ঘেরা এই রাজ্যে করোনার প্রকোপ সবথেকে বেশী। এই কঠিন রোগকে প্রতিহত করা মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সেইসঙ্গে সরকারের উদাসীন মনোভাবও রয়েছে। রাজ্যে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। তাই এবছর বড়ো বাজেটের কোনও পুজো হবে না বলেই আশা করা হচ্ছে।
এমনিতেই লকডাউনের কারণে গ্রামীণ অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে। কোনোরকম সরকারী সাহায্য নেই। একেবারে অসহনীয় অবস্থা। এমত অবস্থায় উৎসবমুখর না হয়ে অনেকেই নিয়ম রক্ষার্থে পুজো করবেন।
ত্রিপুরায় ৩০ শতাংশ জনজাতি মানুষের বসবাস। বেশীরভাগই স্বশাসিত জেলা কাউন্সিল দ্বারা পরিচালিত। এই লকডাউনে আমরা বিভিন্নভাবে মানুষকে সাহায্য করেছি। আমরা ত্রাণ বিতরণ করেছি। নতুন করে একটা টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। যার দায়িত্বে আমি নিজেই রয়েছি। গত লোকসভা নির্বাচনে একটি আসনে আমি প্রার্থীও ছিলাম। উৎসবের দিনগুলিতে মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে বিভিন্নভাবে সাহায্য করব।
তবে প্রাণভোলা আনন্দ আর থাকবে না। আগে এই চারটে দিন বাড়িতে পাত পড়তো না। বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে খাওয়া দাওয়া, আড্ডা দেওয়া, মানুষের সঙ্গে কথা বলা এগুলো হতো। কিন্তু এবার যতটা পারবো সংযত থাকার চেষ্টা করব।
উৎসবের দিনগুলিতে মানুষকে আরও সাবধানে থাকতে হবে। দুরত্ব বজায় রেখে, মাস্ক-স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হবে। যতটা সম্ভব ভিড় এড়ানো যায় সেটা নজর রাখতে হবে। তবেই মারন রোগের হাত থেকে রেহাই মেলা সম্ভব।