মুহুর্তের মধ্যে বদলে যাওয়া নতুন এক পৃথিবী ,ভালো থাকুন তারাদের দেশে……

শুভজিৎ চক্রবর্তী

ছোটবেলা থেকেই সবার ইচ্ছে থাকে অভিনেতা হব। পরে মনে হয় স্টার হব। তারপর মনে হয় সুপারস্টার হব। তারপর, তারপরের ইচ্ছেটা কি হয়?

লাইটস, ক্যামেরা, একশান। যেন হুড়মুড় করে ভেসে আসা রঙিন সেলুলয়েড পর্দায় নিজেদের জীবনের ছাপ রেখে আসা। ভীষণ বড় স্টারডম। সেখান থেকে মুহুর্তের মধ্যে বদলে যাওয়া নতুন এক পৃথিবী।

আদতে এই সমস্ত ভাষাগুলো মানুষের মুহুর্ত বদলাতে পারে। মানুষটাকে না। জীবনে যুদ্ধ করে এগিয়ে যাওয়া যায়। ঠিক যেমনটা করেছিলেন অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত।

ছোটবেলা থেকেই ব্রিলিয়ান্ট ছেলে। পদার্থবিদ্যায় ন্যাশনাল অলিম্পিয়াড সম্মান। বড় হয়ে নাসায় কাজ করব। এটা ছিল সুশান্তের জীবনের লক্ষ্য। বাড়ির ভিতর সাজিয়ে রেখেছেন নাসার ড্রেসে পড়া কিছু ছবি৷ মহাকাশ জগতকে কাছ থেকে দেখার জন্য রয়েছে টেলিস্কোপ।

অভিনেতার স্বপ্ন নিয়ে বম্বে চলে আসা। তার জন্য জীবনে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছে জলাঞ্জলি দিয়েছিলেন। শুরুতে ব্যাক আপ ডান্সার। তারপর হঠাৎ করে একদিন সিরিয়ালে চান্স পাওয়া। ব্যস লাইফ হ্যাস বিন চেঞ্জড।

হঠাৎ করে ডেইলি সোপের চেনা মুখের জায়গা হল অভিষেক কাপুরের সিনেমায়। সেই সিনেমায় তিন নিউ কামারের মধ্যে নজর কাড়লেন সুশান্ত। রাজকুমার এবং অমিতের একটু সময় লাগলেও তারা দুজনেও এই শতকের সফল অভিনেতা।

তারপর একের পর এক চরিত্রে নিজেকে এক্সপেরিমেন্ট করেছেন সুশান্ত। অভিনয়ের আগে তার কাছে ওয়ার্কশপ ছিল সবকিছু। সেখানেও নিজেকে পুরদস্তুর তৈরি রাখতেন। এখানেও তিনি যে বলিউডের ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট তার প্রমাণ রেখেছিলেন।

তারপর শুদ্ধ দেশি রোমান্স, পিকে, ডিটেক্টিভ ব্যোমকেশ বক্সি একের পর এক বিগ বাজেটের হিট ছবির মাধ্যমে স্টার থেকে সুপারস্টার। এমএস ধোনিঃ দ্য আনটোল্ড স্টোরিতে গোটা দেশের মানুষ নতুন করে চিনল সুশান্তকে।

দ্য মোস্ট ইম্পর্টেন্ট থিং ইন লাইফ ইজ টু বি আন্ডারস্টুড। একটিং গিভস ইউ দ্যট। এক বিখ্যাত সাংবাদিককে সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন সুশান্ত।

কিন্তু কি এমন হল যার জন্য সুশান্তকে আত্মহত্যা করতে হল?

অনেকে বলছেন ছিছোড়ে সিনেমার অভিনেতা, যিনি নিজে বলছেন সুইসাইড জীবনের শেষ লক্ষ্য না। তিনি কি করে সুইসাইড করলেন।

আসলে স্টার, সুপারস্টার এবং স্টারডম এসবের কিছুতেই বিশ্বাস করতেন না তিনি। সব শেষ হলে আবার শুরুর থেকে শুরু করার ছেলে ছিল সুশান্ত। কিন্তু অবসাদের সঙ্গে লড়াই করতে গিয়ে হারিয়ে ফেললেন নিজেকে।

“খেরিয়াত পুছো কাভিতো” গান টার কথা এদিন খুব মনে পড়ছে। শনিবার যখন নিজের রুমে এতবড় একটা সিদ্ধান্ত নিতে গেল। তাকে হয়তো এই কথাটা কেউ জিজ্ঞেস করলে সে হয়তো নিজের ইচ্ছে বদলাতে পারতো।

বিশ্বাস হচ্ছে না। এই কথাগুলো বলতে লিখতে একটুও নিজেকে বিশ্বাস করতে পারছিনা যে ৩৪ বছরের সুশান্ত আমাদের সঙ্গে নেই। তার অভিনীত ছবি আর দেখতে পাবো না।

২০২০ আমাদের জন্য কি দিলো? কিন্তু যা হারালাম তার হিসেব কখনও প্রফিটের খাতায় তোলা থাকবে না।

সব কিছু মেনে নিলেও সুশান্ত সিং রাজপুতের কথা কেউ ভুলতে পারবে না। মানসিক অবসাদ কি যে ভয়ঙ্কর, তা হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যাচ্ছিল। হয় না। এটা হতে পারে না। আবার এটা নিয়েই চলতে হবে আমাদের। ভালো থাকুন তারাদের দেশের সুশান্ত।

সম্পর্কিত পোস্ট