‘হারে রে রে রে রে আমায় ছেড়ে দে রে দে রে…..’

দাদার কীর্তি, ভালবাসা ভালবাসা, সমাপ্তি, সুরের ভুবনের মত একের পর এক হিট ছবি দর্শকদের উপহার দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। বলা যেতে পারে সেইসময় বাঙালি উত্তমের কুমারের স্বাদ মেটাচ্ছিল তাপসের অভিনয়ে।

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ  সাদা কালো সেলুলয়েডে যাত্রাপথ শুরু করেছিলেন। ‘সাহেব’ সিনেমার হাত ধরে অভিনয়ে জগতে প্রবেশ। অভিনয়ের দক্ষতা, কথা বলার স্টাইল এবং চোখের চাউনিতে অনায়াসে দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছিলেন বাঙালির হার্টথ্রব তাপস পাল।

আশির দশক থেকেই তিনি বুঝে গিয়েছিলেন বাংলা সিনেমার গ্রহণযোগ্যতা বজায় রাখতে হলে তাকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলতে হবে। দাদার কীর্তি, ভালবাসা ভালবাসা, সমাপ্তি, সুরের ভুবনের মত একের পর এক হিট ছবি দর্শকদের উপহার দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। বলা যেতে পারে সেইসময় বাঙালি উত্তমের কুমারের স্বাদ মেটাচ্ছিল তাপসের অভিনয়ে।

সেই সময়ে চল ছিল না মাল্টিপ্লেক্সের। একমাত্র সিনেমা হলই ভরসা ছিল সিনে-প্রেমিক বাঙালির। আর গ্রাম বাঙলার ঘরে ঘরে তাপস পাল হয়ে উঠেছিলেন ঘরের ছেলে। তাপস পালের ছবি রিলিজ মানেই হু হু করে হলমুখী হতেন জনতা।

শুধুমাত্র বানিজ্যিক ছবিই না, তাপস পাল অভিনিত রোম্যান্টিক, কমেডিয়ান ছবিও হলমুখী করেছিল জনতাকে। এক কথায় বহু প্রযোজকই বাংলা সিনেমায় তাপস পালের হাত ধরে লাভের মুখ দেখতে শুরু করে।

আরও পড়ুনঃ #Oscar2020: বহু ইতিহাসের সাক্ষী রইল ৯২ তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস্ এর মঞ্চ

আশির দশকের শেষের দিক। মেগা হিট তাপস পালের গুরুদক্ষিণা। নতুন করে তাঁর অভিনয়ের ক্যারিশ্মায় মনমুগ্ধ হলেন দর্শকরা। রুপোলি পর্দার জাদুতে যেমন বাঙালীর মনে অতিসহজেই জায়গা করে নিয়েছিলেন তেমনি রাজনীতিতে এসে বাঙালির আরও কাছাকাছি চলে আসেন তিনি।

২০১৪ সালে চৌমহা কান্ডের কথা সকলেরই জানা। বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে সমাজের সর্বস্তরে সমালোচিত হতে হয় তাঁকে। সেখান থেকেই ছন্দপতনের শুরু। ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমাও চান। তারপর থেকেই সব কিছু তালগোল পাকাতে শুরু করে।

তাপস পালের জীবনাবসানের খবর ছড়িয়ে পড়তেই শোকের ছায়া নেমে আসে রুপোলি পর্দায়। বাদ যায়নি রাজনৈতিক কচকচানিও। সব কিছুকে উপেক্ষা করে প্রিয় অভিনেতাকে শেষবারের মত বিদায় জানাতে শামিল হয়েছেন অগুনতি মানুষ। শুধু তাই নয়। বিতর্ক ভুলে এদিন তাপসের জন্য কেঁদেছে চৌমহার মানুষও।

তাঁকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে গিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন মুখ্যমন্ত্রী। সমস্ত বিতর্ক, রাজনীতিকে পিছনে ফেলে তিনি বাঙালির মনে যে আসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন, সেখানেই যে থাকবেন, তা আরও স্পষ্ট করে দিয়েছে এত মানুষের চোখের জল।

আরও পড়ুনঃ জেটম্যানে চড়ে ভিন্সের নয়া মাইলস্টোন

ক্যাওড়াতলা মহাশ্মশানে গান স্যালুটের মাধ্যমে শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় তাপস পালের। সেইসঙ্গে অবসান হল একটা যুগের। সেই সঙ্গে বাংলা চলচ্চিত্র জগতে নক্ষত্র পতন।

ভাল থাকুন আপনি। যতদিন বাঙালি থাকবে ততদিন গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকবেন আপনি, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

সম্পর্কিত পোস্ট