করোনা অভিশাপ না আশীর্বাদ, বাস্তব বিবেচনার সময় এসেছে

সর্নিকা দত্ত

গভীরভাবে চিন্তা করলে এখন প্রত্যেক ভারতীয় এর মধ্যেই একটা চিন্তার ছাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না এর পেছনে রয়েছে কোভিড -১৯ মতো মারাত্মক ভাইরাসের বাড়বাড়ন্ত কাজ করছে। এই অবস্থা যে শুধু ভারতের এমনটা নয়, পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের অন্তর্মন যাচাই করে দেখলে তাতে একটা ভয়ের ছবি লক্ষ্য করা যাবে।

আজকে আমাদের সমাজ যতই আধুনিক বা এগিয়ে যাক না কেন, কোভিড -১৯ এর কাছে আমরা অসহায়।  আমাদের মনের মধ্যে ভবিষ্যৎকে নিয়ে একটা আশঙ্কা, একটা উদ্বেগ বাসা বেধেছে। এটাই বোধহয় এই মুহূর্তে এই মারণ ভাইরাসের সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকারক রূপ।

অথচ আমরা যদি আমাদের প্রাচীন ভারতের দিকে তাকাই, তাহলে দেখব আমাদের প্রাচীন সংস্কৃতিতে আমাদের মুনি-ঋষিরা একাকীত্ব পছন্দ করতেন। সাংসারিক জীবন থেকে সরে গিয়ে তারা একান্তে তপস্যা করতেন, শুধুমাত্র নতুন করে মানসিক শক্তি অর্জনের জন্য। এর অর্থ কোন ধর্মীয় বিষয়কে তুলে ধরা নয়।

করোনা আবহঃ মানবিকতা না প্রচার ,কে আগে ??

বরং প্রাচীন ভারতে আমরা যে সংস্কৃতি বা যে জীবনযাত্রায় আমরা অভ্যস্ত ছিলাম, আজ অতি আধুনিকতায় সেটাই অতীত। বরং এখন আমরা শুধু জীবন-জীবিকার কথা ভেবে আত্মকেন্দ্রিক হয়ে বাঁচার চেষ্টা করছি। আর সে কারণেই মাত্র ৫০ দিনের লকডাউনেই আমরা একরকম হাঁপিয়ে উঠেছি।

এই মুহূর্তে অনেকেই মনে করছেন, তাঁদের জীবন হয়তো শেষ হয়ে যাচ্ছে। আবার অনেকেই মনে করছি, বর্তমান পরিস্থিতিতে হয়তো আমাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে।

একটু ভেবে দেখলেই বোঝা যাবে, এখন আমরা কতটা আসক্তি পূর্ণ জীবন যাপন করছি। কিন্তু হাজার বছর আগের সেই জাঁকজমক হীন জীবনেও একাকীত্ব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এর সুযোগ নিয়ে বিশ্ব কল্যাণের কথা ভাবা হতো। এখন আমাদের চিন্তা ভাবনা শুধু নিজেদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে গিয়েছে।

আর তাই মনস্তাত্ত্বিকরা মনে করছেন, আমাদের ব্যক্তিজীবনেও এখন অবসাদ মানসিক সমস্যা এবং পারিবারিক হিংসার ঘটনা বাড়ছে।এখন আমরা আর প্রতিবেশী বা অন্যের কথা ভাবি না। কিভাবে আরও অনেক কিছু পাওয়া যায় সে কথাই বেশি বেশি করে ভাবি। আর সামান্য কোনও ঘটনা ঘটলেই তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বদলে চিন্তায় পড়ে যাই।

মনস্তাত্ত্বিকরা বলছেন, আমাদের জীবনযাত্রার পরিভাষা বদলের এটাই সঠিক সময়। সকলেই মনে করছেন কোভিড -১৯ শেষ হয়ে গেলে হয়তো সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু বাস্তব এটাই যে সবকিছু আবার আগের মত করে ঠিক হওয়া সম্ভব নয়। বরং আগামী দিনে অনেক কিছুই বদলে যেতে চলেছে।

বিভিন্ন মহল থেকে শোনা যাচ্ছে, কোভিড -১৯ পরিবেশের জন্য বরদান হয়ে এসেছে। নদী গুলির জলে আশ্চর্যজনকভাবে দূষণ কমেছে এই সময়। বায়ুমণ্ডল দূষণ মুক্ত হয়েছে অনেকটাই। এমনকি ব্যক্তিজীবনেও আমরা আগের থেকে অনেক বেশি সচেতন।

পরিষ্কার, পরিচ্ছন্নতা নিয়ে আমরা বেশি ভাবছি। এর পিছনেও একটা ইঙ্গিত রয়েছে বলছেন বিশেষজ্ঞরা। আধুনিকতার কুপ্রভাবের ফল এই কোভিড -১৯ এর ধ্বংসলীলা। তাই আগামী দিনে আমরা আধুনিকতাকে পুরোপুরি বর্জন করতে পারবো এ কথা বলা অতিশয়োক্তি।

তবে আধুনিকতার পথে হাঁটার সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ ও এই বর্তমানের পরিবর্তন গুলির কথা আমাদের মাথায় রাখা উচিত।
বিশেষজ্ঞেরা তো অনেকেই বলছেন,কোভিড -১৯ আমাদের জন্য অভিশাপ নয় বরং আশীর্বাদ হয়েই এসেছে।

ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এর থেকে আমরা একটা শিক্ষা দিতে পারি। নিজেদের আরও বেশি স্বাস্থ্যসচেতন, পরিচ্ছন্ন ও পরিবেশ সচেতন করে তুলতে পারি।

এখন প্রশ্ন, বাস্তবে কি আমরা এই বদল চাই। যদি এই সংকট থেকে সত্যিই আমরা ভালো কিছু শিক্ষা নিতে পারি তাহলে তা সভ্যতার জন্য অবশ্যই কল্যাণকর হবে বলে মনে করছেন তারা।

সম্পর্কিত পোস্ট