ভাগীরথীর পাড়ে জঙ্গিপুর, ঘাসফুলের শক্ত ঘাঁটিতে মুকুটহীন সম্রাট জাকির হোসেন

নয়ন রায়

রাজনীতি করতে গেলে টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশন কী কী লাগে? একজন সমাজেসেবকের কি কখনও রাজনীতির প্রয়োজন হয়? নাকি রাজনীতির মূলমন্ত্র সমাজসেবা? কলকাতা থেকে সুদূরে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বেড়াচ্ছেন ভাগীরথী পাড়ের জঙ্গিপুরের মানুষ।

কারণ তাঁকে যারা অভিভাবক হিসাবে চেনেন তিনি আর পাঁচটা রাজনৈতিক নেতাদের থেকে আলাদা। গোটা দেশে যখন রিসোর্টের বড় হলঘরে রাজনীতির বৈঠক চলছে, তখন মাটির সঙ্গে মিশে গিয়ে মানুষের সাহায্য করতে ছুটে বেড়াচ্ছেন জঙ্গিপুরের তৃণমূল বিধায়ক। করোনা থাকলেও বিপদে মানুষের পাশে থাকতে হবে। এটাই জাকির হোসেনের মুলমন্ত্র৷

মুর্শিদাবাদে পারিবারিক ব্যবসা ছিল নিজেদের। বড়দার মৃত্যুর পর বিড়ি ব্যবসার দায়িত্ব বর্তায় জাকিরের ওপর। দীর্ঘ সময় ধরে ব্যবসা ধরে রেখেছেন নিজেই। রাজ্য ছাড়িয়ে সেই ব্যবসা পাড়ি দিয়েছে দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশে।

প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিক প্রতিদিন কাজ করেন কারখানায়। করোনা কালেও তাঁদের সাহায্যে পাশে জাকির হোসেন। বিড়ি ব্যবসার পাশাপাশি অন্যান্য ব্যবসাও বাড়তে শুরু করে। আর পাঁচটা শিল্পপতির মতোই জাকির হোসেনের দৌলতে এলাকার অর্থনৈতিক মানচিত্রের পরিবর্তন ঘটে।

তবে রাজনীতি করতে গিয়ে সামাজিক কাজ এবং মানুষের কাছ থেকে কখনই দূরে সরে যাননি। এমনিতেই শিক্ষার দিক থেকে দীর্ঘ সময় বঞ্চনার শিকার হয়েছে জঙ্গিপুর এবং তার আশেপাশের এলাকা। তাই যে মাটিতে ব্যবসা করেছেন, সেই মাটিতে শিক্ষার প্রসার ঘটালেন অভিভাবক জাকির।

তাঁর হাত ধরে বিএড কলেজ, ডিএড কলেজ, পলিটেকনিক কলেজ, ফার্মেসী কলেজ এতগুলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠল জঙ্গিপুরের মাটিতে। শুধুমাত্র উচ্চশিক্ষা নয়, নার্সারি থেকে ক্লাস টুয়েলভ অবধি বাংলা এবং ইংরেজি উভয় মিডিয়ামে নিজের উদ্যোগে স্কুল খুললেন জাকির হোসেন৷

শুধুমাত্র পশ্চিমবঙ্গ নয়, ভিন রাজ্য থেকেও ছাত্রছাত্রীরা আসেন এখানে পড়াশুনার জন্য। -জেলায় শিক্ষার চালচিত্র পাল্টে দিয়েছেন জঙ্গিপুরের বেতাজ বাদশা।

কিন্তু এখানেও সমস্যা হচ্ছিল। প্রথমদিকে মানুষের সাহায্য করতে গিয়ে বেশ কিছু সমস্যায় পড়তে হচ্ছিল অরাজনৈতিক জাকির হোসেনকে। তাই মমতা বন্দোপাধ্যায়ের উন্নয়নে শামিল হতে শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে মুলস্রোতের রাজনীতিতে প্রবেশ করলেন।

জাকিরের মতো ক্লিন ইমেজকে কাজে লাগিয়ে জঙ্গিপুর বিধানসভা থেকে জয়লাভ করলেন মুখ্যমন্ত্রী৷ পরে মমতা বন্দোপাধ্যায় দিলেন শ্রম দফতরের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব।

তবে রাজনীতিতে প্রবেশ করেও বিন্দুমাত্র অভ্যাস বদলায়নি। আগের মতোই মানুষের সেবায় ২৪ ঘন্টা নিয়োজিত। বন্যা হোক, অথবা কোনও প্রাকৃতিক দুর্যোগ। অভিভাবক জাকিরকে সর্বক্ষণ কাছে পাবেই মানুষ। এটাই তাঁদের কাছে প্রত্যাশা।

এটাই মেলাতে গিয়ে ভুল করে ফেলেন শহরতলীর রাজনীতিবিদরা। একজন সফল ব্যবসায়ী হয়েও বিন্দুমাত্র আমোদ প্রমোদে বিশ্বাস করেন না। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে আদর্শ মেনে করে চলেছেন অক্লান্ত পরিশ্রম।

http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/the-fire-department-is-preparing-to-provide-better-services-to-the-people-every-pujo-pandal-has-a-fire-extinguisher/

বাংলা তথা জাতীয় রাজনীতিতে মুর্শিদাবাদ জেলা থেকে প্রচুর বাঘা বাঘা কংগ্রেস নেতার আবির্ভাব ঘটেছে। একচ্ছত্র ভাবে রাজ করেছেন অনেকেই। তাই মনে হয়েছিল অরাজনৈতিক জাকিরের লড়াইটা কঠিন হবে। কিন্তু তা হয়নি। মানুষের ভোটের জবাবে জঙ্গিপুরের ‘নবাব’ হলেন জাকির।

২১ বিধানসভা নির্বাচন আর কিছু মাসের অপেক্ষা৷ বিরোধী শক্তির সক্রিয়তা বা চোখ রাঙানিকে পরোয়া না করে নিজের ফর্মুলাকে কাজে লাগিয়ে চলেছেন। এলাকায় চিকিৎসার উন্নতি এখনও অনেকটা বাকি।

তাই নতুন করে একটি মেডিক্যাল কলেজ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সেই সঙ্গে এলাকার শিক্ষার মানকে আরও উন্নত করতে এবং মুর্শিদাবাদের মানুষের মধ্যে শিক্ষার সঞ্চার করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে চান।

কড়া পাকের মুখরোচক শব্দের রাজনৈতিক নেতাদের হেডলাইন কভার করতে গিয়ে অচিরেই হারিয়ে যান এই সমস্ত নেতারা। যারা দিনরাত এক করে কার্যত লড়াই করে চলেছেন। যাদের অস্তিত্ব দলকে অক্সিজেন জোগায়। তাঁদের রাজনৈতিক ফর্মুলা কি? এর উত্তর তলিয়ে রয়েছে ভাগীরথী বক্ষেই।

সম্পর্কিত পোস্ট