ডেঙ্গি মোকাবিলায় জরুরি নির্দেশ রাজ্যের, আতঙ্কের মধ্যেই স্বস্তি দ্রুত আসছে ভ্যাকসিন
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ডেঙ্গি নিয়ে পরিস্থিতি ক্রমশ গুরুতর হয়ে উঠছে। প্রতিদিন রাজ্যে নিয়ম করে সাড়ে পাঁচশোর উপর মানুষ এই মশা বাহিত ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে। এই বছর আক্রান্তদের অনেককেই হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা সঠিক সময় বৃষ্টি না হলেও পরের দিকে বর্ষা শুরু হওয়ায় পরিস্থিতি আরও বিগড়েছে।
জেলায় জেলায় বাড়ছে সংক্রমণ। এই অবস্থায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা রাজ্য প্রশাসনের। জেলাশাসক ও জেলার হেল্থ অফিসারদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেও পরিস্থিতি খুব একটা বদল হয়নি। এই অবস্থায় জরুরি পাঁচ দফা নির্দেশিকা জারি করল নবান্ন।
নবান্নর জরুরি এই পাঁচ দফা নির্দেশিকার উদ্দেশ্যই হল ডেঙ্গিতে মৃত্যু হওয়ার ঘটনা আরও কমিয়ে ফেলা এবং সংক্রমণ যত দ্রুত সম্ভব প্রতিরোধের চেষ্টা করা।
১) প্রতিটি মেডিকেল কলেজ, জেলা ও মহকুমা হাসপাতালে ডেঙ্গি এবং ম্যালেরিয়া আক্রান্তদের জন্য পৃথক ওয়ার্ড খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যান্য রোগীদের সঙ্গে ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়া আক্রান্তদের রাখা চলবে না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। ওই নির্দেশিকায় ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়া ওয়ার্ডে শয্যার সংখ্যা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।
সভার জায়গা বাছাইয়ে মমতাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ মীনাক্ষীর! ২০-তে উত্তাল হতে পারে কলকাতা
২) হাসপাতালগুলিতে জ্বর নিয়ে কেউ এলেই ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়া টেস্টের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা ও মহকুমা হাসপাতালগুলিতে যাতে দ্রুত নমুনা পরীক্ষা করে তার রিপোর্ট জানিয়ে দেওয়া যায় সেই বিষয়টির উপর জোর দিতে নির্দেশ দিয়েছে নবান্ন।
৩) ডেঙ্গি এবং ম্যালেরিয়ার উপসর্গ থাকা রোগীদের হয়রানি রোধেও কড়া বার্তা দিয়েছে রাজ্য। বারবার আউটডোরে রোগীদের যেন ঘুরতে না হয় সেটার দিকে হাসপাতাল প্রশাসনকে নজর রাখতে বলেছে। একবার আউটডোরে আসার পর রক্ত পরীক্ষা করে তার রিপোর্টের ভিত্তিতে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
৪) আশা কর্মীদের ইতিমধ্যেই ডেঙ্গি ও ম্যালেরিয়া সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। তাদের দ্রুত ময়দানে নামিয়ে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে এই মশা বাহিত ভাইরাস সম্বন্ধে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা এবং অত্যাবশ্যকীয় নির্দেশগুলি মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
৫) কোনও ডেঙ্গি আক্রান্ত বাড়িতে থাকলে সেই বাড়ি ও তার আশপাশ স্থানীয় প্রশাসনকে স্যানিটাইজ করার নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য। যা করোনাকালীন সময়ে মেনে চলা হতো।
ডেঙ্গি নিয়ে উদ্বেগ বাড়িয়েছে এর নতুন ডেন-৩ স্ট্রেন। সেই সঙ্গে পুরনো ডেন-২ স্ট্রেন আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠায় বিপদ বাড়ছে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। একাংশের আশঙ্কা ডেঙ্গির ভাইরাসের সঙ্গে করোনা ভাইরাসের মিলিত কোনও অভিযোজন ঘটেছে। তাই এবার ডেঙ্গি আক্রান্তদের অনেকের রক্তে হঠাৎ করেই অক্সিজেন লেভেল কমে যেতে দেখা যাচ্ছে। অথচ এটা আগে হতো না। ফলে বিপদ বাড়ছে।
যদিও এতো উদ্বেগের মধ্যেও আশার আলো আছে। দেশে খুব দ্রুত ডেঙ্গি ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু হতে চলেছে। কলকাতার নাইসেডও এই ট্রায়ালে অংশ নেবে। ইন্ডিয়ান ইমিউনোলজিক্যালস লিমিটেডের ভ্যাকসিন ইতিমধ্যেই পশুদের দেহে সফল হয়েছে। এবার তা মানবদেহে পরীক্ষার ছাড়পত্র পেয়েছে। এই ট্রায়াল সফল হলে খুব দ্রুত বাজারে চলে আসবে ডেঙ্গির ভ্যাকসিন।
সানোফি ইন্ডিয়া প্রাইভেট লিমিটেড নামে আরেকটি ভারতীয় সংস্থার ডেঙ্গির ভ্যাকসিনের ট্রায়ালও দেশে শুরু হতে চলেছে। উল্লেখ্য এই সংস্থার তৈরি ডেঙ্গির ভ্যাকসিন ইতিমধ্যেই আমেরিকায় ছাড়পত্র পেয়ে গিয়েছে। তা সেখানকার মানুষের মধ্যে প্রয়োগও শুরু হয়েছে।