কোহলির আর ‘বিরাট’ হওয়া হল না!
দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ভারতীয় ক্রিকেটের ‘বিরাট’ রাজ শেষ। শনিবার সন্ধ্যে কোহলির ট্যুইট প্রকাশ্যে আসার পর এই খবর দাবানলের মতো সর্বত্র ছড়িয়ে গিয়েছে। তাই খবরটা নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। কিন্তু এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে নিশ্চিত হয়ে গেল কিং কোহলির আর ‘বিরাট’ হওয়া হল না!
কপিল দেব নিখাঞ্জ কপিল হয়ে উঠতে পেরেছিলেন বিশ্বকাপ জিতেছিলেন বলেই। মহেন্দ্র সিং ধোনি ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যাটার-উইকেটকিপার হলেও তিনি ধোনি হয়ে উঠতে পারতেন না যদি দুটি বিশ্বকাপজয়ী দলের অধিনায়ক না হতেন।
বিশ্ববিখ্যাত অলরাউন্ডার থেকে প্রতিপক্ষের মনে কাঁপুনি ধরিয়ে দেওয়া স্টিভ ওয় হতে পারতেন না যদি না অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বজয়ী দলের ক্যাপ্টেন হতেন। এঁরা সকলেই গ্রেট ক্রিকেটারদের ভিড়ে হয়তো হারিয়ে যেতেন, যদি না ট্রফি জয়ী অধিনায়ক হতেন। তার মানে কী বিশ্ব ক্রিকেটে শুধুমাত্র কাপ জয়ী অধিনায়কদেরই কদর আছে? তা তো না, সেইরকম কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন বলেই বিশ্বকাপ না জিতেও সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বা হ্যান্সি ক্রোনিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসেবেই চিরস্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন।
কারণ কাপ না জিতলেও নিজেদের দলে তারা কিছু একটা ঘটিয়েছিলেন, যার জন্যই তাঁদের এতো কদর। অবশ্যই এই ‘কিছুটা’ কী তা নিয়ে ক্রিকেটবোদ্ধাদের মধ্যে যথেষ্ট বিতর্ক আছে। টেস্টে বিরাট কোহলির পরিসংখ্যান বলছে তিনি ৬৮ টি ম্যাচে ভারতীয় দলের অধিনায়কত্ব করেছেন। তার মধ্যে ৪০ টি ম্যাচে জয়ী হয়েছে বিরাটের দল।
শতাংশ হিসেবে রিকি পন্টিং ও গ্রেম স্মিথের পরই গোটা বিশ্বে সবচেয়ে সফল টেস্ট অধিনায়ক কিং কোহলি এবং এই এশিয়া মহাদেশের মধ্যে তিনিই সবচেয়ে সফলতম টেস্ট অধিনায়ক। তবু কিং কোহলি বিরাট হওয়ার আগেই স্বেচ্ছায় ক্যাপ্টেন্সির টুপিটা খুলে রাখলেন। বোধহয় সম্মান বাঁচাতে খুলে রাখতে বাধ্য হলেন।
ওয়ানডে ক্রিকেটের অধিনায়ক হিসেবে বিরাট যে ভারতীয় দলকে তেমন কোনও সাফল্য এনে দিতে পারেননি তা দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। অবশ্য ভক্তরা সেই বিষয়টি মানতে চান না। তাঁরা নানান পরিসংখ্যান হাজির করে প্রমাণ করতে চেষ্টা করেন এই দেশের মধ্যে সবচেয়ে সফলতম অধিনায়ক কোহলি। কিন্তু সত্যিটা হল কোহলি কোনও আইসিসি ট্রফি দিতে পারেননি দেশকে।
Punjab Assembly Election 2022: প্রথমদফায় প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে চমক কংগ্রেসের
এদিকে তিনি যখন ভারতের অধিনায়ক হয়েছেন তখন আর সেভাবে ত্রিদেশীয় বা চতুর্দশীর সিরিজ হয় না। তাই কিছু কঠিন ত্রিদেশীয় বা চতুর্দশীয় সিরিজ জিতে নিজের সাফল্যের পরিসংখ্যানের প্রতি জোর দাবী তুলবেন সেই জায়গাটাও নেই কোহলির।
বরং টেস্ট ক্রিকেটে অধিনায়ক হিসেবে কোহলির পরিসংখ্যান এবং প্রভাব কিছুটা হলেও উল্লেখের দাবি রাখে শুধু। তাঁর আমলে দীর্ঘদিন ধরে টেস্ট ক্রমতালিকায় এক নম্বরে আছে ভারতীয় দল। যদিও গত বছর বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল ম্যাচে সেই তাঁরাই হেরে বসেন নিউজিল্যান্ডের কাছে। বলা যেতে পারে কোহলির আমলে ভারতীয় দল একসময়ের দক্ষিণ আফ্রিকার মতো চোকার্স হয়ে উঠেছিল। মোক্ষম সময়ে ব্যর্থ হওয়াটাই তার ধারা ছিল।
এদিকে এই কোহলি শুধুমাত্র নিজের ইগো ফলানোর জন্য অনিল কুম্বলের মতো কিংবদন্তিকে কোচের পদ থেকে সরে যেতে বাধ্য করেছেন। নিজের পছন্দের রবি শাস্ত্রীকে কোচ করার জন্য বারবার ব্ল্যাকমেল করেছেন বিসিসিআইকে। টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে ক্রিকেটের ক্যাপ্টেন্সি ছাড়া নিয়ে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো কিংবদন্তিকে প্রকাশ্যেই আক্রমণ করে বসেন। শুধু তাই নয়, রাহুল দ্রাবিড়ের মতো মহাতারকা দলের কোচ হয়ে এসে যথেষ্ট নমনীয় মনোভাব দেখালেও কোহলি তাঁকে ভালো করে মেনে নিতে পারেননি।
দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের ভারতীয় দলের ড্রেসিংরুম থেকে যে সমস্ত তথ্য বাইরে ভেসে এসেছে তা থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার বাকি দল রাহুল দ্রাবিড়ের দিকে থাকলেও কোহলি অদ্ভুতভাবে কোচের বিরোধিতা করে যাচ্ছিলেন। যদিও ঠাণ্ডামাথার রাহুল বারবার তাঁর সঙ্গে সমস্যা মিটিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু তাতে বিন্দুমাত্র সাড়া দেননি ভারতীয় ক্রিকেটের এই মহাতারকা।
তার উপর নড়বড়ে দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে সিরিজ খোয়ানোর পর সবেধন নীলমণি টেস্ট ক্রিকেটেও কোহলিকে আর অধিনায়ক রাখা হবে কিনা তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করতে শুরু করে বিসিসিআই। এই অবস্থায় সম্ভবত লজ্জার হাত থেকে বাঁচতেই শনিবার সন্ধেয় টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়ার কথা ঘোষণা করলেন কোহলি।
ব্যাটার কোহলির প্রতিভা বা তাঁর দক্ষতা নিয়ে কারোর কোনও প্রশ্ন নেই। প্রশ্ন থাকতেও পারে না। তিনি যতদিন খেলবেন বিনা প্রশ্নে ততদিন ভারতীয় দলের প্রথম একাদশেই ব্যাটার হিসেবে নির্বাচিত হবেন। কিন্তু মহার্ঘ অধিনায়ক হিসেবে কোহলির আর বিরাট হওয়া হল না!