‘অ্যাটাক ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স’ নীতি নিয়ে তৃণমূল কী ভুল করে ফেলল?

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ ফুটবল মাঠে একটা চালু বিষয় আছে। যে দলের ডিফেন্স মানে রক্ষণভাগ দুর্বল, তারা ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজলেই তেড়েফুঁড়ে আক্রমণ করতে থাকে। উদ্দেশ্য হল, বিপক্ষকে আক্রমণে আক্রমণে এমন ব্যতীব্যস্ত রাখা যাতে তাদের বল দুর্বল রক্ষণভাগে বল এসে না পৌঁছতে পারে।

রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের বর্তমান পদক্ষেপ দেখে ফুটবল মাঠের এই প্রচলিত কৌশলের কথা মনে পড়ছে রাজনীতির কারবারিদের। পার্থ-অনুব্রত গ্রেফতার হওয়ার চাপ কাটাতে ‘অ্যাটাক ইজ দ্য বেস্ট ডিফেন্স’ নীতি নিল কি তৃণমূল কংগ্রেস?

পরপর দলের দুই হেভিওয়েট নেতা দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই প্রবল চাপে পড়ে গিয়েছে তৃণমূল। বিশেষ করে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠের বাড়ি থেকে যেভাবে বান্ডিল বান্ডিল নোট উদ্ধার হয়েছে সেই দৃশ্য দেখে কার্যত তাজ্জব বাংলার মানুষ।

কারণ এসব দৃশ্য দেশের অন্যান্য প্রান্তে প্রচলিত থাকলেও পশ্চিমবঙ্গে এর আগে কেউ এমন কিছু দেখেনি। স্বাভাবিকভাবেই আমজনতার ক্ষোভ গিয়ে পড়েছে তৃণমূলের উপর। একটা বড় অংশের মানুষ মনে করছে তাঁরা তৃণমূল কংগ্রেসের হাতে প্রতারিত হয়েছেন।

বাড়ি বাড়ি পৌছল পানীয় জল, কেন্দ্রের দেওয়া লক্ষমাত্রা পূরণের পথে বাংলা

এই পরিস্থিতিতে আমজনতার ক্ষোভকে হাতিয়ার করতে বিজেপি, সিপিএম এমনকি কংগ্রেস পর্যন্ত ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। তারা কোনরকম প্রমাণ ছাড়াই তৃণমূল নেতাদের উদ্দেশ্যে চোর চোর বলে চেঁচাতে শুরু করেছে। এই ‘চোর’ শব্দটা ক্রমশ গণ হিস্টোরিয়া হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ফলে ক্রমশই বিড়ম্বনা বাড়ছে শাসক দলের।

এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার থেকে পাল্টা ময়দানে নেমেছে তৃণমূল। যা শনিবারও অব্যাহত। এরই মাঝে বীরভূমের স্থানীয় নেতার পাশাপাশি তাদের পরিচিত মুখ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের লোকসভা কেন্দ্রে গিয়ে ‘বদলা চাই’ এর হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। চুঁচুড়ার তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদার প্রকাশ্য মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে কটুক কথা বললে এবার ধোলাই হবে!

তৃণমূল নেতারা বিরোধীদের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি ছাড়তে শুরু করলেও সরাসরি দলের বদলে ছাত্র ও যুব সংগঠনের ব্যানারে কেন্দ্রীয় এজেন্সি ও অনুব্রতকে গ্রেফতারের প্রতিবাদ জানানো শুরু হয়েছে। বোঝাই যাচ্ছে দলের নবীন প্রজন্মকে এই সময় সামনে এগিয়ে দিয়ে তারা পরিস্থিতি সামলাতে চাইছে‌। কিন্তু আমজনতা আদৌ কি বিষয়টা ভালোভাবে নিচ্ছে?

পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দল থেকে সাসপেন্ড করার দিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছিলেন, আপাতত কোথাও কোন দলীয় সভা সমাবেশ করা যাবে না। কিন্তু অনুব্রত গ্রেফতার হতেই কিছুটা আবেগের বশে, আবার কিছুটা আশঙ্কায় শক্তি প্রদর্শনের তাগিদে রাস্তায় নেমে পড়েছে তৃণমূল। এতে পরিস্থিতি কতটা সামলানো যাবে তা সময় বলবে। কিন্তু সাধারণ মানুষ বিষয়টা মোটেও ভালোভাবে দেখছে না।

তাদের মনে হচ্ছে অনুব্রতর অন্যায় ঢাকার চেষ্টা করছে শাসক দল। যদিও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বিষয়ে কিছুটা হলেও দূরত্ব তৈরীর পরিকল্পনা সফল হয়েছিল। তাই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে, আক্রমণাত্মক হয়ে পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে ভুল হয়ে গেল না তো?

সম্পর্কিত পোস্ট