ক্ষমতায় কে? বিরোধীই বা কারা?
।। শুভজিৎ চক্রবর্তী ।।
একসময় ছিল টেলিফোন এখন সেখান থেকে স্মার্টফোন। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানুষের চাহিদা দিনের দিন বাড়তে থাকতে। প্রগতিশীল দেশের জন্য বিষয়টি তখনই সুখকর হবে যখন দেশের জনগণের চাহিদা সরকার মেটাতে সক্ষম হবে। যদিও চাইলেই চাঁদ যে মিলবে না এটাও স্বাভাবিক।
কিন্তু দেশের রাজকোষের দিকে তাকিয়ে সরকারের পদক্ষেপ মানুষকে একটু রিলিফ দেবে, এটাই তাঁরা আশা করেন। কিন্তু গুটিকয়েক মানুষের মধ্যে প্রশ্নের লম্বা সারণী কখনও শেষ হয় না। রাজনীতির ভাষায় তাঁদেরই বিরোধী বলে।
রাজনীতির থিওরি অনুযায়ী সরকার চালাতে যেমন সরকার পক্ষের ভুমিকা থাকে। তেমনই সরকারের খুঁত ধরাতেও বিরোধীদের ভুমিকা থাকে। এই দুজনের মধ্যে আদতে সাধারণ মানুষের লাভ হবে বলেই তাঁরা জনপ্রতিনিধি বেছে নেন।
কিন্তু ভারতবর্ষের মত বৈচিত্র্যময় দেশে রাজনীতিরও বিচিত্রতা রয়েছে। সেখানে কেন্দ্র সরকার রাজ্যের বিরোধিতা করে, রাজ্য সরকার কেন্দ্রের বিরোধিতা করে। এর ফলে আদতে লাভ তো দূরে থাক, ক্ষতিপূরণ করতে গিয়েই হিমশিম অবস্থা হয় সাধারণ মানুষের।
রবিবার কলকাতার জনসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ট্যাগ লাইন ছিল “আর নয় অন্যায়”। বাংলার জনসাধারণের কাছে আর্জি জানালেন মাত্র পাঁচ বছর ক্ষমতায় এলে বিজেপি সোনার বাংলা গড়বে।
কিন্তু ঠিক তার কিছুক্ষণ আগেই ওয়াই চ্যানেল থেকে আসা বিজেপির এক মিছিলে শোনা গেল “দেশ কে গদ্দারকো, গোলি মারো…” সাধারণ মানুষের কাছে এ যেন আলাদা করে যন্ত্রণা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছ থেকে ভালো কিছু শব্দ শোনার আগেই সেই ভিডিও ভাইরাল।
এ নিয়ে বামেদের তরফ থেকে পুলিশের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠল। বিপুল পরিমাণ পুলিশ মোতায়েন থাকা সত্বেও তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হল না কেন ?
প্রশ্ন এখানেই। রাজ্যের বিরোধী তালিকায় মাত্র ১৪ টি আসনে রয়েছে বিজেপি। যেখানে ২১০ টি আসনে রয়েছে তৃণমূল। সেখানে যদি পুলিশ এই স্লোগানবাজদের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ না নেয় তাহলে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক।
কিন্তু অমিত শাহের ভাষণে একটা জিনিস নিয়ে ব্যক্তিগত প্রশ্ন রয়েছে। উনি বললেন এতদিন নাকি সপা-কংগ্রেস-মমতা রাম মন্দির করতে দেয়নি। কিন্তু রাম মন্দিরের ইস্যু তো বহুদিন ধরে আদালতে ঝুলে ছিল। সেখানে মমতার ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার কারণ কি?
আরও পড়ুনঃ ২১ এর খোলা চ্যালেঞ্জ, মোকাবিলা করতে পারবেন তো মুখ্যমন্ত্রী?
উনি বললেন রাজ্যে বেকারত্বের সংখ্যা বেশী, রাজ্যের অর্থনীতির অবস্থা খারাপ, রাজ্যের আইন শৃঙ্খলার খুব খারাপ অবস্থা। সত্যিই দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেটা বলেছেন একেবারে সঠিক।
কিন্তু অমিত শাহ তো বিরোধী হয়ে প্রশ্ন করলেন। কিন্তু সরকারের ভূমিকায় থেকে প্রতিশ্রুতি দিলেন না। কারণ দেশজুড়ে যে অবস্থা চলছে তার প্রতিফলন তো রাজ্যেও হয়েছে।
এবিষয়ে সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে মহম্মদ সেলিম বললেন রাজ্যের অর্থনীতি চৌপাট হয়ে গিয়েছে। আর দেশের অর্থনীতির অবস্থা খারাপ। ফলে প্রশ্ন উঠছে বিরোধী কে? খুঁত ধরার অভ্যাস কার রয়েছে।
এরই মধ্যে কখনও “দিদিকে বলো”, কখনও “আর নয় অন্যায়” সহ কর্পোরেট বিজ্ঞাপনে জেরবার মানুষ। একটা ফেল হলে আবার একটা। এখন মিসড কল দিলে নেতাদের সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
এতো নতুন ক্যাম্পেন রোজ ঘরে নেতারা এসে উপস্থিত হচ্ছে। কিন্তু সাধারণ মানুষের প্রশ্নের উত্তর কারা দেবে? জনপ্রতিনিধি? তাহলে বিরোধী কে? খুঁত ধরার অভ্যাস কার রয়েছে। পুরোটাই গোলমেলে ব্যাপার।