উনুন ধরানোর কাঠের বোঝা তোলার শক্তিশালী হাত অলিম্পিকের রূপোলি কন্যা মীরাবাঈয়ের

দ্য কোয়ারি ডেস্ক: বিস্ফোরণে বারবার কেঁপে ওঠা, রক্তাক্ত মনিপুর সহ অন্যান্য প্রতিবেশি কয়েকটি রাজ্যে টানা চলছে বিতর্কিত আফস্পা (AFPSA) আইন। জঙ্গি গতিবিধি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনির বিশেষ নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী আন্দোলন বারবার বিশ্বজোড়া আলোচনার কেন্দ্রে এনেছে মনিপুরকে। এমনই রাজ্যের বাসিন্দা সাইখোম মীরাবাঈ চানু। তিনিই টোকিও অলিম্পিকে ভারোত্তোলনে রুপ জয়ী।

জন্মের পর থেকে সেনা ও জঙ্গিদের সংঘর্ষ গা সওয়া হয়ে গিয়েছে মীরাবাঈ চানুর। উত্তর পূর্ব ভারতের অন্যতম সন্ত্রাসবাদ উপদ্রুত রাজ্য মনিপুরের কমবেশি সবাই এমন অভিজ্ঞতায় পুষ্ট। মূলত মাতৃতান্ত্রিক সমাজ (যেখানে মহিলারা সবকিছুর নিয়ন্ত্রক) ঘেরা মনিপুর থেকে মীরাবাঈ যেভাবে ক্রীড়া দুনিয়ায় উঠে এসেছেন সেই ঘটনাগুলো কৌতুহল জাগায়।

পূর্ব ইম্ফলের মেইতেই উপজাতি পরিবারের কন্যা মীরাবাঈ ছোট থেকেই শক্তিশালী। কেমন তার শক্তি? প্রতিবেশিরা জানাচ্ছেন, খুব ছোট থেকেই রান্না ঘরের উনুন ধরানোর জন্য কাঠ সংগ্রহ করে আনতেন মীরাবাঈ। সেই বোঝা নিজের ওজনের থেকেও বেশি হতো। দিনের পর দিন এভাবেই কাঠের বোঝা টেনেছেন তিনি। তার এই শক্তির পরিচয় দেখে হতবাক হয়ে যেতেন বাড়ির সবাই।

একটু বড় হতেই মীরাবাঈ জড়িয়ে পড়েন ওয়েটলিফ্টিং খেলার সঙ্গে। ভারোত্তোলনের এই খেলায় দৈহিক শক্তি ও ক্ষীপ্রতায় সতীর্থ বাকিদের থেকে অনেকটা এগিয়ে ছিলেন মীরাবাঈ চানু। উপজাতি পরিবারের জীবন তাঁর মন দৃঢ় করতে ভূমিকা নেয়। চানু ভারোত্তোলনের উচ্চতর প্রশিক্ষণ নিতে প্রবল আগ্রহী হন।

রাজ্যস্তরে সফল ভারোত্তোলক হওয়ার পর মীরাবাঈ চানু জাতীয় ক্ষেত্রে নজর কাড়েন। এরপর তাঁর সফলতা আসতে শুরু করে আন্তর্জাতিক বিভিম্ন প্রতিযোগিতায়। কমনওয়েলথ গেমস, এশিয়া চ্যাম্পিয়ন ও বিশ্ব চ্যাম্পিয়শিপ প্রতিযোগিতায় দু’বার সোনা ও দু’বার ব্রোঞ্জ জয়ী হন। তবে গত রিও অলিম্পিকে চানুর সফলতা আসেনি।

মীরাবাঈ চানু যখন শিশু, তখন অর্থাৎ ২০০০ সালে সিডনি অলিম্পিক থেকে ভারোত্তোলনে ব্রোঞ্জ এনেছিলেন করনম মালেশ্বরী। তাঁর এই জয় ছিল দেশে প্রথম কোনও মহিলার ব্যক্তিগত অলম্পিক খেতাব পাওয়া। স্বাভাবিকভাবেই মালেশ্বরী খুশি। তিনি চানুকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। একুশ বছরের মাথায় টোকিও অলিম্পিক থেকে মীরাবাঈ চানু রুপো আনলেন।

মীরাবাঈ যখন ওজন তোলার মতো খেলায় নিজেকে গড়ে পিঠে নিচ্ছিলেন, তখন মনিপুর সহ দেশ জুড়ে ভারোত্তোলক কুঞ্জরানি দেবীর ক্যারিশ্মা। তবে কুঞ্জরানি অলিম্পিকে সফল হননি। কিন্তু বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে তাঁর বারবার রুপো জয় রীতিমতো নজরকাড়া সফলতা।

মনিপুর থেকে আইকন হয়েই রয়েছেন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, অলিম্পিকে ব্রোঞ্জ পাওয়া মহিলা বক্সার মেরি কোম। তিনি কিংবদন্তি। টোকিও অলিম্পিকেও তিনি রয়েছেন। তাঁর ঘুসির জোর দেখতে মুখিয়ে আছেন ভারতীয়রা।

তবে মালেশ্বরীর সেই নজরকাড়া ব্রোঞ্জ জয়ের পর
অলিম্পিকে রুপোলি নজির গড়লেন মীরাবাই চানু। মনিপুরের বাসিন্দা চানুর শক্তিশালী হাত ভারতের মান রাখল।

সম্পর্কিত পোস্ট