করোনা মারাত্মক, কিন্তু এর থেকেও মারাত্মক সিএএ এনআরসি এনপিআর, বলছে শাহিনবাগ

সংবিধান বাঁচাও আওয়াজকে সামনে রেখে সিএএ-এর বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ দেশের গণআন্দোলনে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।

দ্য কোয়ারি ডেস্ক : করোনা ভাইরাসের আতঙ্কে সতর্কতামূলক নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার। সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে।

ফলে প্রশ্ন উঠছে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ এবং এনপিআর ও এনআরসি বিরোধী অবস্থান বিক্ষোভগুলি কি তবে থমকে যাবে।

গত প্রায় তিনমাস ধরে দিল্লির শাহিনবাগে সিএএ, এনপিআর, এনআরসি-র বিরুদ্ধে লাগাতার অবস্থান করছেন মহিলারা।

সংবিধান বাঁচাও আওয়াজকে সামনে রেখে সিএএ-এর বিরুদ্ধে তাদের প্রতিবাদ দেশের গণআন্দোলনে এক ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে।

শাহিনবাগের আন্দোলনে অনুপ্রাণিত হয়ে দেশের অন্তত ৬০টি জায়গায় বিক্ষোভ অবস্থান শুরু করেছেন মহিলারা।

সংশ্লিষ্ট রাজ্য প্রশাসন বিভিন্ন কৌশলে তাদের বিক্ষোভ অবস্থান তুলে দেওয়ার চেষ্টা করে ব্যর্থও হয়েছে।

কিন্তু করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে প্রায় প্রতিটি রাজ্য সরকার। তাই এইসব বিক্ষোভ অবস্থানের ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

যদিও শাহিনবাগ হোক বা লখনউয়ে ঘণ্টাঘর বা বিহারের সব্জিবাগ বা কলকাতার পার্কসার্কাস, প্রতিবাদী মহিলাদের সাফ কথা সিএএ প্রত্যাহার করলেই তাঁরা অবস্থান তুলে নেবেন।

দিল্লি দাঙ্গা, লোকসভায় দিল্লি পুলিশের পক্ষে সাফাই অমিত শাহের, ও্য়াকআউট করল কংগ্রেস

তা না হলে তাঁদের বিক্ষোভ চলবে। করোনা ভাইরাসের বিপদ নিয়ে যখন সারা বিশ্ব আতঙ্কে, তখনও নিজেদের অবস্থানে অনড় প্রতিবাদী মহিলারা।

করোনা নিয়ে তাঁদের ভয় নেই। জমানো ঠাণ্ডায় বিক্ষোভ অবস্থান শুরু করেছিলেন শাহিনবাগের প্রতিবাদীরা।

দুধের শিশুকে কোলে নিয়ে এক প্রতিবাদী তার মধ্যেও বিক্ষোভ অবস্থানে নিয়মিত ছিলেন।

প্রচন্ড ঠান্ডায় তাঁর সন্তানের মৃত্যু হয়। তবুও তিনি প্রতিবাদ অব্যাহত রেখেছেন। সেখানে করোনা তাঁদের টলাতে পারবে কিনা প্রশ্ন তা নিয়েও।

করোনা সতর্কতায় দিল্লি সরকার একসঙ্গে ৫০ জনের সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু এনিয়ে একেবারেই চিন্তিত নন প্রতিবাদীরা।

মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমকে শাহিনবাগের প্রতিবাদীরা জানান, মারাত্মক করোনা ভাইরাসের থেকেও মারাত্মক ভাইরাস মোদির ওই কঠোর আইন।

তাঁদের প্রশ্ন, সরকার সংখ্যাটা কেন ৫০ করল? ৪৫ জনের সমাবেশে বা দু’জন একসঙ্গে থাকলে কি ভাইরাস সংক্রামিত হবে না? দিল্লি দাঙ্গায় ঘরবাড়ি হারিয়ে বহু মানুষ একটি শিবিরে রয়েছেন, তাঁদের জন্য সরকার কি করছে?

এক প্রতিবাদী বলেন, আমরা বুঝতে পারছি করোনা ভাইরাস মারাত্মক বিপজ্জনক, কিন্তু আমাদের জন্য সমান বিপদ সিএ এ, এনআরসি, এনপিআর।

তিনি আরও বলেন, গত তিনমাস ধরে আমরা বিক্ষোভ অবস্থান করছি। ওই আইন প্রত্যাহার করা না হলে আমরা থামব না।

অপর এক প্রতিবাদী মহিলা বলেন, প্রায় ৫০ জন মানুষ বাস, ট্রেন বা  বিমানে চড়ছেন প্রতিদিন। কেজরিওয়াল তাঁদের থামাবেন? বিয়ের অনুষ্ঠান তিনি বন্ধ করে দেবেন?

নয়া নাগরিকত্ব আইন নিয়ে দাঙ্গা হল। বহু মানুষ মারা গেলেন। তখন মুখ্যমন্ত্রী একটি কথাও বলেননি। তবে এখন কেন তিনি কথা বলছেন?

তাঁদের আরও প্রশ্ন, ৫০ সংখ্যাটা এল কোথা থেকে? এটা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা আইসিএমআর-এরও নয়, আবার কোনও স্বাস্থ্য দফতরও দেয়নি।

ফের ধাক্কা খেল যোগী সরকার, এলাহাবাদ হাইকোর্টের পর সুপ্রিম কোর্টও মান্যতা দিল না হোর্ডিং পদক্ষেপকে

আসলে এই পরিস্থিতিতে মুখ্যমন্ত্রী কৌশল করে শাহিনবাগের প্রতিবাদীদের সরিয়ে দিতে চান। এখানকার প্রতিবাদী মহিলারা যথেষ্ট স্বাস্থ্য সচেতন।

চিকিৎসকদের পরামর্শে মাস্ক পরছেন প্রত্যেকে। হাত পরিষ্কারও রাখছেন এবং নিরাপদ দূরত্বও বজিয়ে রাখছেন তাঁরা।

তিনি আরও বললেন, ৫০ জনে আমরা আটকে থাকব না। প্রতিবাদীদের সংখ্যাই আমাদের শক্তি। আমরা ডিটেনশন ক্যাম্পকে ভয় পাই, করোনা ভাইরাসকে নয়।

মোদির ওই কুখ্যাত আইন করোনার থেকেও মারাত্মক। তাঁরা বিক্ষোভ অবস্থান অব্যাহত রাখবেন বলেও জানান।

সম্পর্কিত পোস্ট