‘অশনি’ সঙ্কেতে সুন্দরবন ঘিরে ব্যস্ততা বুঝিয়ে দিচ্ছে ঘূর্ণিঝড় আসে যায় বদলায় না কিছুই

দ্য কোয়ারি ওয়েবডেস্কঃ মাত্র দেড় শতাব্দী আগেও বারুইপুর, বজবজের মত দক্ষিণ ২৪ পরগনার মফস্বল এলাকাগুলি সুন্দরবনের অংশ ছিল। আজকের ক্যানিং (Canning) সেই সুন্দরবনের (Sundarban) একেবারে কোর এরিয়ায় অবস্থান করত। কিন্তু ক্রমশ পিছু হটতে হটতে সুন্দরবনের আজ দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।

তার প্রভাব পরিবেশে পড়ছে। এদিকে বিজ্ঞানীরা বলছেন অবিলম্বে সুন্দরবন রক্ষায় সকলকে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তাকে নিজের মত করে বাঁচতে দেওয়া দরকার। ওই এলাকা থেকে সমস্ত জনপদ সরিয়ে আনা প্রয়োজন। কিন্তু শুনছে কে! তাই ঘূর্ণিঝড় আসে যায়, সুন্দরবনের ছবিটা একই থাকে।

সুন্দরবনের বিপর্যয় শুধু তার একার নয়, বরং অসংখ্য মানুষের প্রাণ যেতে শুরু করেছে সেখানে আছড়ে পড়া একের পর এক ঘূর্ণিঝড়ের জেরে। আর সম্পত্তিহানি, অর্থের অপচয় ধরলে হিসেব মেলানোই মুশকিল। আয়লার ধাক্কায় সুন্দরবনের প্রায় সমস্ত চাষ জমি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। এক দশক পেরিয়ে গিয়েছে আজও ওই সমস্ত জমিতে ফসল ফলানো সম্ভব হয় না। তারপর‌ও আছড়ে পড়েছে অগণিত ঘূর্ণিঝড়।

অশনি : ফসলের ক্ষয়ক্ষতি আটকাতে দক্ষিণবঙ্গের কৃষকদের একগুচ্ছ পরামর্শ

‘অশনি’ সঙ্কেতে সুন্দরবন

ভূ-প্রাকৃতিক কারণে সুন্দরবন ঘূর্ণিঝড় প্রবণ এলাকা। কিন্তু আগে এতটাও ঘূর্ণিঝড়ের হামলা হত না সেখানে। কিন্তু শেষ পাঁচ বছরে দেখা যাচ্ছে প্রতিবছর নিয়ম করে একাধিক ঘূর্ণিঝড় এসে হাজির হচ্ছে। আর তার ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই এসে হাজির হচ্ছে আরেকটি।

এই অবস্থায় বিশেষজ্ঞদের মতে হল সমুদ্র থেকে সুন্দরবন এলাকার ৫০ কিলোমিটারের মধ্যে কোন‌ও জনবসতি রাখা চলবে না। সেখানকার মানুষকে পর্যাপ্ত পুনর্বাসন দিয়ে সরিয়ে আনতে হবে। সেই সঙ্গে কংক্রিটের বাঁধ নয়, বরং সুন্দরবনজুড়ে গাছের সারিতে ভরিয়ে তুলতে হবে। যাতে ঘূর্ণিঝড়গুলি স্থলভাগের ভেতরে বেশিদূর এগোতে না পারে। একের পর এক গাছের ঘন জঙ্গলে ধাক্কা খেয়ে সে যেন থমকে যায়।

কিন্তু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ রূপায়নের ক্ষেত্রে সরকারের কোনও আগ্রহ নেই। বর্তমানে সুন্দরবন এলাকায় ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষ বসবাস করেন। তাদের পুনর্বাসন দেওয়াটা মুখের কথা নয়। রাজ্য সরকারের একার পক্ষে এ কাজ সম্ভব নয়। কেন্দ্রের সাহায্য দরকার।

সত্যি বলতে রাজ্য-কেন্দ্র মিলে কাজ করলেও এটা বাস্তবায়িত করা সম্ভব হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। আসলে আন্তর্জাতিক জনমত গড়ে তুলে সর্বস্তর থেকে সমস্ত সাহায্য এনে হাজির করলে তবেই আর্থিক এবং বাস্তবের মাটিতে দাঁড়িয়ে এই বিপুল পুনর্বাসন প্রকল্প বাস্তবের মুখ দেখতে পারে।

কী হলে কী হবে সে তো একটা দিক। কিন্তু সঠিকটা না হওয়ায় ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস পেতেই সুন্দরবন এলাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। এক্ষেত্রে বিন্দুমাত্র ঝুঁকি নিতে রাজি নয় প্রশাসন। বিষয়টি একদিক থেকে ঠিকই হচ্ছে।

এতে মানুষের প্রাণ বাঁচবে ঠিকই, কিন্তু যে বিপুল পরিমান ক্ষতি হবে তা ক্ষতিপূরণ দিও পূরণ করা যায় না। তাছাড়া বছরে একাধিক ঘূর্ণিঝড় আসতে শুরু করেছে। হলে বাঁধে ফাটল মেরামত সম্ভব হচ্ছে না। সব মিলিয়ে সপ্তাহের শুরুতেই ফের সুন্দরবনকে নিয়ে আতঙ্ক চরমে উঠেছে।

সম্পর্কিত পোস্ট