আনন্দ করার পাশাপাশি সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিন অসহায় মানুষগুলির দিকেওঃ সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়
সুরজিৎ মুখোপাধ্যায়, পৌর প্রশাসক, সোনামুখি পৌরসভা
দুর্গাপুজো এসে গেছে। ছোটবেলার কাশফুল আর শিউলির গন্ধমাখা স্মৃতি আজও টাটকা। তাই তো পুজো এলে এখনও নস্ট্যালজিক হয়ে যাই। ছোটবেলার ঘটনা আর সেভাবে মনে না পরলেও আজকের সোনামুখির সঙ্গে সেদিনের সোনামুখীর বেশ তফাৎ তা হলফ করে বলতে পারি।
যুগের সঙ্গে সব কিছু পাল্টায় জানি। আমাদের সোনামুখী শহর ও গ্রাম মিলিয়ে বয়সটা বেশ পুরানো। আমাদের সময় হেমন্ত, সন্ধ্যা, মান্না দে-র পুজোর গান আর পুরোনো দিনের লেখকদের পুজোর সংখ্যার জন্য হুড়োহুড়ি লেগে ছিল। এখন আর সেসব নেই। বয়স আর রাজনৈতিক কাজকর্ম আমাকে বড় বেশি ব্যস্ত করে তুলেছে। তবে সোনামুখিতে পারিবারিক পুজো বেশি হতো। বারোয়ারী পুজো হলেও তা তেমন ভাবে হতো না।
পুজো এলে নতুন জামা প্যান্টের গন্ধমাখা আড্ডাটা মিস করি। এখন বুড়ো হয়ে গেছি কিন্তু আনন্দকে বিদায় দিইনি। তবে এবারের পুজো একেবারে অন্যরকম।কারোনা সব শেষ করে দিল। মানুষের হাসি, আড্ডা, বন্ধুত্ব,পারিবারিক পরিবেশেও কোথাও যেন পাকাপাকি ভাবে জায়গা করে নিয়েছে সামাজিক দূরত্ব।
খুব বেদনা নিয়ে ‘কালবেলা’ পত্রিকায় ও দ্য কোয়ারি তে পুজোর লেখা লিখছি। মন ভাল নেই। সকলেরই কমবেশী তাই। আর যারা এই মহামারীতে নিজের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন তাদের ব্যথাটা সবচেয়ে বেশী। আমার রাজনৈতিক সহকর্মী বিধায়ক গুরুপদ মেটে চলে গেল। একসঙ্গে কাজ করার স্মৃতি গুলো এখনো টাটকা।
তবুও আমরা এই সভ্যতার অংশীদার। বেদনা থাকলেও তা মানিয়ে নিয়ে এগিয়ে যাওয়াটাই রীতি। পুজোর ঢাকের আওয়াজ শুনতে শুনতে মায়ের পুজোর অঞ্জলি দিতে হবে তবে দূরত্ব মেনে। ‘কালবেলা’ পত্রিকায় স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে কলম ধরছি বটে, তবে আমি নিয়মিত লেখক না।
স্টুডেন্টস্ পলিটিক্স সময় কিছু লেখালেখি হতো ঠিকই। তখন একটা জোশ ছিল। এখন জোশ কেন মনটা উবে গেছে। আমার লেখা যারা পড়বেন তাদের বলি বিশ্বাস করুন মনটা নেই। করোনা যেভাবে ক্ষতি করলো তা বোঝানো সম্ভব না।
মনে আছে, ছোটবেলা ঠাকুমার কাছে পয়সা নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে পুজো দেখতে যেতাম। তার আনন্দ ছিল অনাবিল। সোনামুখীর কালিকার্তিক মন্দির আমাদের গর্বের। এখন মন্দিরটা সংস্কার হয়েছে। আমাদের ছোটবেলার সঙ্গে এই মন্দিরের ইতিহাস জড়িয়ে আছে।
http://sh103.global.temp.domains/~lyricsin/thequiry/the-worship-of-the-old-house-is-different-this-time-chandranath-sinha/
তবু বলি এই বছর পুজো হবে নিয়ম মেনেই। পুজোর ক’টা দিন আড্ডা-তাস খেলার পাশাপাশি পুজোর ভোগ খাবো। পুজোর উদ্বোধন করতেও যেতে হবে। পাঠকদের সবার উদ্দেশে বলি, সবাই করোনা যুদ্বে জয়ী হওয়ার প্রয়াস জারি রাখবেন আনন্দের মাঝেও। মা আসছেন। তিনিই উদ্ধার করবেন আমাদের। তাঁর দিকেই আমরা তাকিয়ে আছি।
পুজো সকলের ভালো কাটুক। আনন্দ করুন। কিন্তু যারা পিছিয়ে পড়া মানুষ ও গরিব মানুষ তাদের দিকে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিন। তাহলে আমার-আপনার মত ওরাও আনন্দ করার সুযোগ টুকু পাবে। আশা রাখি আগামী বছর সব বাধা বিপত্তি কাটিয়ে ফের আগের মত পুজোরর আনন্দে মেতে উঠবে আপামর বাঙালী।